বাজেট বাস্তবসম্মত নয়, বাস্তবায়নযোগ্যও নয়: ড.আজিজুল ইসলাম


নিজস্ব প্রতিবেদক

আরটিএনএন

ঢাকা: ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। ঘোষিত বাজেটের আকার ‘বাস্তবসম্মত নয়’ এবং বাজেটে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা কিছু কারণে ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’ বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।

আজ শুক্রবার (১২ জুন) মোবাইল ফোনে বাজেট প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এটি একটি আশান্বিত বাজেট। কিন্তু বাস্তবায়ন সবচেয়ে দুরূহ কাজ হবে।

এই বাজেট কেন বাস্তবায়নযোগ্য হবে না- এর কারণ ব্যাখ্যা করে ড. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমত, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এটি অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিশ্বব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাক্কলন করেছে ১ শতাংশ, সেটি হয়তো আরও বেশি হবে। সেখান থেকে ৪-৫ শতাংশ ধরা হলে উচ্চাভিলাসী হতো না।

তিনি বলেন, রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে এনবিআরের কাছ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে এনবিআর বলেছে, তাদের পক্ষ থেকে এটি আদায় করা সম্ভব হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামায় ভ্যাট আদায় হবে না। আমদানিতে ধসের ফলে শুল্ককর আদায় হবে না।

তিনি বলেন, অনেকের আয় কমে গেছে। ফলে আয়করও কমে যাবে। করপোরেট ট্যাক্স আদায় কমবে। এর মধ্যে বেশকিছু করের মাত্রা কমানো হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ড. আজিজুল ইসলাম বলেন, এ লক্ষ্যমাত্রার বাজেট বাস্তবায়ন করা হলে ঘাটতির মাত্রা আরও বেশি হবে। বাজেটে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি ধরা হয়েছে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান করতে না পারায় ঘাটতির মাত্রা সেখানে কমার আশঙ্কা রয়েছে।

বাজেট বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, অর্থায়নের সূত্রের মধ্যে ব্যাংক থেকে নেয়া হবে ৮৫ হাজার কোটি টাকা। যদি বেশি মাত্রার অর্থ আসে তাহলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। সরকারের উচিত বৈদেশিক সাহায্য ও বিনিয়োগ এবং সহজ শর্তের ঋণ নেয়ার চেষ্টা করা। সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষাখাতের বরাদ্দ ঠিক আছে। এখন বিশ্লেষণ করতে হবে, যেগুলো দেয়ার কথা বলা হয়েছে সেগুলোর কতটুকু সামঞ্জস্য তা-ও দেখতে হবে।

এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজার মৃতপ্রাপয়। সরকার যদি ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে থাকে, তবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রভাব কমে যাবে। এবারের বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

ড. আজিজুল বলেন, করোনার কারণে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মের কোনও উপায় রাখা হয়নি বাজেটে। শিল্প খাত বাঁচাতেও তেমন কিছু দেখছি না। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ আগেও ছিল। এবারও দেয়া হয়েছে। অতীতে এটাতে খুব বেশি লাভ দেখা যায়নি।

তবে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোয় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমবে এবং করমুক্ত সর্বনিম্ন হার ও করপোরেট কর হার কমানোর উদ্যোগ ভালো হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

ড. আজিজুল ইসলাম মনে করেন, প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ানো এখন নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে। এ ধারা থেকে সরে আসতে হবে। জাতীয় বাজেটের আকার বাস্তবসম্মত হতে হবে। তাহলেই বাজেটের ব্যয় জোগার সহজ হবে।

সাবেক এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, গত কয়েক বছর ধরে অবাস্তব বাজেটের আকার নির্ধারণ করে অবাস্তব রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। এই অবাস্তব হিসাবের ওপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর পরিণতি হিসেবে অর্থবছরের শেষ দিকে সব কাটছাঁট করতে হচ্ছে।