বিমানযাত্রার সময় যে বিষয়গুলো নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে
নিউজ ডেস্ক
আরটিএনএন
ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে বিদেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাওয়ার পর যাত্রীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন দেশ একে একে নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, এরপর বিমানের ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় অনেক দেশ। খবর বিবিসি বাংলার
মার্চে বাংলাদেশ থেকে সব ধরণের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের সাথে পুনরায় বিমান চলাচল শুরু হয়েছে।
অনেকের মনেই এখন প্রশ্ন যে, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে বিমানযাত্রায় কী ধরণের সুরক্ষা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
এভিয়েশন স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশষজ্ঞদের একটি প্যানেল বলছে, এয়ারপোর্টে কোন যাত্রী করোনাভাইরাস সংক্রমিত কি-না তা প্রমাণে থার্মাল-ইমেজওয়ালা ক্যামেরা ও সোয়াব পরীক্ষা এখন আর নির্ভরযোগ্য কোন পরীক্ষা নয়।
বরং প্রতি তিনজনে একজন আক্রান্ত ব্যক্তিকেই এই পদ্ধতির মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
তবে, বিমানের বাতাস পরিবাহী ব্যবস্থা এবং কম আর্দ্রতার কারণে এমনিতেই বিমান ভ্রমণের সময় ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার হার কিছুটা কমে থাকে।
কিন্তু ইতোমধ্যেই বিমানযাত্রীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন আইকাও।
এছাড়া যাত্রীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেস স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
যাত্রীর করণীয় কী?
এভিয়েশন স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভ্রমণের আগে একজন যাত্রীকে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
ব্রিটিশ এভিয়েশন এবং ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্টের বিশেষজ্ঞদের একটি দল সংক্রমণ ঠেকাতে যাত্রীদের কিছু বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে:
* হাত পরিষ্কার রাখা, কারণ হাত থেকেই এই ভাইরাস বেশি ছড়ায়। এজন্য অ্যালকোহল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
* হাঁচি অথবা কাশির সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে, এরপরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
* যাত্রীকে অবশ্যই পুরোটা সময় মাস্ক পরিধান করতে হবে, সম্ভব হলে অন্য যাত্রীদের থেকে অন্তত ছয় ফুট দূরে বসতে হবে।
* অপর ব্যক্তি এবং তাদের ব্যাগেজ থেকে দুই মিটার মানে ছয় ফুট দূরত্বে থাকুন।
* যেহেতু ড্রপলেটসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায়, সেকারণে হিসেব করতে হবে বিমানের কেবিনে একজন যাত্রী হাঁচি বা কাশি দিলে সেটা কতদূর পৌছুতে পারে। সাধারণত ছয় ফুট দূরত্বের মধ্যে পড়বে সিটের হাতল, যাত্রীর সামনে রাখা ট্রে-টেবল, সিট-ব্যাগ। সুতরাং এই জায়গাগুলো ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।
* যাদের আসন কেবিনের পেছন দিকে, তারা আগে বসবেন এবং শেষে নামবেন।
* যতটা সম্ভব কম টয়লেট ব্যবহার করুন।
বিমান যাত্রীর সুরক্ষায় আইকাও এর নির্দেশনা
আইকাও বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয়ক আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ, ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের বিমান সংস্থার জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করেছে সংস্থাটি।
আইকাও এর নির্দেশনা অনুযায়ী একজন যাত্রীর সুরক্ষার ব্যবস্থা বিমানবন্দর থেকেই শুরু করতে হবে।
পয়লা জুন আইকাও একটি নির্দেশনা জারি করে যেখানে টিকেট কাটা থেকে শুরু করে, বোর্ডিং কার্ড নেয়া অর্থাৎ বিমানে আরোহণের আগ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে সতর্কতা নেয়া এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কথা বলা হয়েছে।
* টিকেট কাউন্টার, ইমিগ্রেশন, এবং বোর্ডিং কার্ড ইস্যু করার বুথ এই প্রতিটি জায়গায় কর্মীরা সুরক্ষা সামগ্রী যেমন মাস্ক, ফেস শিল্ড, গ্লাভস পরিধান করবেন।
* টার্মিনালের ভেতরে বিমানবন্দর কর্মী ও যাত্রী উভয়ের ব্যবহারের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে হবে।
* প্রতিটি বিমানে নির্ধারিত আসন সংখ্যার সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে।
* বিমানে যাত্রীদের সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করতে হবে, বিশেষ করে ভ্রমণকালীন সময়ে প্রত্যেক যাত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে।
* বিমানের শেষ তিনটি সারি খালি রাখতে হবে, যাতে কোন যাত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সেখানে নিয়ে সেবা দেয়া যায়।
দেশিয় বিমান সংস্থা কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
দেশীয় বিমান সংস্থার মধ্যে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা এবং নভোএয়ার এই মূহুর্তে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
এর মধ্যে বিমান প্রতি সপ্তাহে একটি করে শিডিউল ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বিবিসিকে বলেছেন, প্রতি রোববার লন্ডনে একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান।
তবে, সম্প্রতি দেশের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণের সময় যাত্রীদের কোন সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করা হয়নি, সামাজিক মাধ্যমে এমন অভিযোগ করতে দেখা গেছে বাংলাদেশ থেকে ইটালি যাওয়া যাত্রীদের কয়েকজনকে।
এছাড়া পরপর কয়েকটি ঘটনায় বাংলাদেশ থেকে গিয়ে অন্য দেশের বিমানবন্দরে কোভিড-১৯ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন কয়েকজন বাংলাদেশি যাত্রী, এমন অভিযোগও উঠেছে।
এ কারণেই দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশিদের ভিসা দেয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মিজ খন্দকার এসব অভিযোগ নাকচ করে বলেছেন, একেক দেশে বিমান ভ্রমণের জন্য একেক ধরণের নির্দেশনা ও মানদণ্ড থাকে।
কোন দেশ কোভিড-১৯ নেগেটিভ সার্টিফিকেট চায়, কোন দেশ আবার একটি নির্দিষ্ট মেডিকেল ফর্মে কিছু তথ্য চায়, যা পূরণ করলেই বিমান ভ্রমণের অনুমতি পান একজন যাত্রী, মানে তিনি তখন ভ্রমণ করতে পারেন।
তিনি বলেছেন, বিমান বাংলাদেশের প্রত্যেক যাত্রীকে বোর্ডিং কার্ড নেবার সময়ই একটি 'হাইজিন কিট' দেয়া হয়, যার মধ্যে একটি মাস্ক, একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং একজোড়া গ্লাভস থাকে।
যাত্রা শুরুর আগে আইকাও এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতিটি বিমান 'ডিসইনফেক্ট' করা হয়।
আমরা শিডিউল ফ্লাইট এবং চার্টার্ড ফ্লাইট দুই-ই পরিচালনা করছি। দেখা যায়, বিমানের ভেতরে চার্টার্ড ফ্লাইটের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার তেমন প্রয়োজন পড়ে না। কারণ যাত্রী সংখ্যা সীমিত থাকে। কিন্তু শিডিউল ফ্লাইটে আমরা আইকাও এর নির্দেশনা মেনে চলি পুরোপুরি। কিন্তু এক পরিবারের সদস্য হলে পাশাপাশি বসতে পারবেন যাত্রীরা।
এছাড়া যাত্রাকালীনও কিছু নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। কেবিন ক্রুরা ফেস শিল্ড পরিধান করে থাকবেন।
যাত্রাকালে সাধারণত খাবার পরিবেশনের ধরণে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেমন খাবার মেন্যুতে শুকনো প্যাকেটজাত খাবার দেয়া হচ্ছে।
আগে ট্রেতে করে খাবার পরিবেশন করা হত, সেটা না করে এখন বক্সে করে শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে। পানির বোতল সিট পকেটে রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ফ্লাইটে দেয়া পত্রিকা সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
পয়লা জুন বিমান চলাচল চালু হবার পর থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে সবচেয়ে বেশি যাত্রী ইতালি গেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স কেবল চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করে।
প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেছেন, যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে তারা কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ ছাড়া কোন যাত্রী পরিবহন করছেন না।
সংস্থাটি ভারত, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং প্যারিস এই কয়েকটি রুটে চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনা করেছে, এতে তিন হাজারের বেশি যাত্রী ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।