টিকার অনিশ্চয়তা কাটেছেই না, ২য় ডোজ নিয়ে চরম সংকট
নিউজ ডেস্ক
আরটিএনএন
ঢাকা: প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার জন্য তিনি নিবন্ধন করেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা রুম্পা জাহান। কিন্তু সরকারের প্রথম ডোজ টিকা সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত এসেছে সেটাতে তিনি হতাশ।
রুম্পা জাহান বলছেন, যেহেতু তাকে প্রতিদিন কাজে বের হতেই হয় - তাই টিকা নেয়াটা তার খুব দরকার। খবর বিবিসি বাংলার
তিনি বলছেন অফিস -আদালত বন্ধ হলেও ব্যাংক খোলা। আমাকে বাইরে বের হতেই হবে, কাজে আসতেই হবে। তাই টিকা নিতে চেয়েছিলাম। এখন আমি খুবই হতাশ। এই মহামারির সময় একমাত্র ভরসা ছিল টিকা। সেটা যদি দিতে না পারি তাহলে সাবধান থাকার পরেও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
রুম্পা জাহানের মত অনেকেই নিবন্ধন করেছেন আবার অনেকে প্রথম ডোজ টিকা নিয়ে অপেক্ষা করছেন দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার।
প্রথম ডোজ সরকার আপাতত বন্ধ করেছে, আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
করোনাভাইরাসের এই টিকা ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে সরকার চুক্তির মাধ্যমে নিয়ে আসছে।
সরকারের কোভিড ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রধান, ড. শহীদুল্লাহ বলছিলেন সিরাম ইন্সটিউটের সংগে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৩ কোটি টিকার যে চালান পাওয়ার কথা ছিল সেটা পাওয়া যাচ্ছে না।
তাই সরকারের কাছে যেটা মজুদ আছে তা দিয়েই ২ ডোজের কাজ যাতে চালানো যায় - সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ড. শহীদুল্লাহ বলেন এ পর্যন্ত পেয়েছি এক কোটি দুই লক্ষ। সেটার উপর নির্ভর করে সরকার অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে টিকা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। প্রথম ডোজের সাথে দ্বিতীয় ডোজ চলছিল। এখন যারা প্রথম ডোজ যারা নিয়েছে তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে।
তিনি বলেন, এই অনিশ্চয়তার মাঝখানে সরকার এখন ভাবছে কি পরিমাণ টিকা আছে। কারণ ২৭ লক্ষ লোক ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছে। বাকি যারা আছে তাদের দিতে গেলে আনুমানিক ১২লক্ষ ডোজ ঘাটতি হবে।
ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট ৫০ লক্ষ টিকা প্রস্তুত করে রেখেছে বাংলাদেশকে দেয়ার জন্য। কিন্তু ভারতের সরকারের অনুমতি না থাকায় তারা এখন দিতে পারছে না।
এদিকে বাংলাদেশের কাছে যে পরিমাণ টিকা আছে সেটা দিয়ে মধ্য মে মাস মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেয়া যাবে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ২০ লক্ষ টিকা পাওয়া যাবে।
সেটা পাওয়া গেলে প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন তারা সবাই দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে সরকার রাশিয়া এবং চীন থেকে টিকা আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বিভিন্ন আইন-কানুন, বিধিনিষেধ মেনে কবে নাগাদ সেই টিকা দেশে আসবে - সেটা এক বড় প্রশ্ন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বে-নজীর আহমেদ বলছেন, যদি এই টিকা প্রাপ্তির বিষয়টা ৩/৪মাস পিছিয়ে যায় - তাহলে বড় একটা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়বে দেশ।
তিনি বলেন, নিশ্চয় এর একটা প্রভাব পড়বে। তিন-চার মাসে যদি আমরা কয়েক কোটি লোককে টিকা দিতে পারতাম, বিশেষ করে শহরগুলোতে যেখানে সংক্রমণ বেশি, তাদের বেশিরভাগকে যদি টিকার আওতায় আনা যেত - তাহলে আমরা সুরক্ষা পেতাম।
এই তিন-চার মাসের গ্যাপ, ভারতের যে ভয়ানক অবস্থা সেটার ঢেউ যদি বাংলাদেশে আসে, আবার এক ডোজ পেল দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছে না তারা খুবই হতাশ হবেন, মনক্ষুন্ন হবেন। আবার নিবন্ধন করেছিলেন তারা না পেলে তারা হতাশ হবেন, সব মিলিয়ে আমরা একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে যাচ্ছি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৮ হাজারের ৪০০ মানুষ। তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৬৬জন।
রবিবার বিকেল ৫:৩০ মিনিট পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেছেন ৭২ লক্ষ ২৪ হাজার ৩০৭ জন।