অক্সফোর্ডের টিকা ৯৩% অ্যান্টিবডি তৈরি করে
নিউজ ডেস্ক
আরটিএনএন
ঢাকা: অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেয়ার পর ৯৩% মানুষের মধ্যেই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
বাংলাদেশে যারা এই টিকা গ্রহণ করেছেন, তাদের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে এমন ফলাফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এস এম সামসুজ্জামান। খবর বিবিসি বাংলার
তিনি বলেন, প্রথম ডোজ নেয়ার পর ৪১% মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার তথ্য জানতে পেরেছেন তারা।
সামসুজ্জামান জানান, তার নেতৃত্বে ডিএমসির একদল গবেষক গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু করে পরবর্তী ৫ মাস ধরে এই গবেষণার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
যার উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশের মানুষের উপর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কতটা কার্যকর হয় সেটি জানা।
তারা জানতে চেষ্টা করেন যে, প্রথম ডোজ নেয়ার পর কত শতাংশ মানুষ এবং দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর কত শতাংশ মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
এই গবেষণায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, অধ্যাপক, চিকিৎসক, কনসালটেন্ট এবং চিকিৎসাকর্মীসহ মোট ৩০৮ জনের উপর এই গবেষণা চালানো হয়।
এরা সবাই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণ করেছেন। প্রথম ডোজ দেয়ার চার সপ্তাহ পরে এবং পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে একবার রক্ত নেয়া হয়েছে। এবং দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকে চার সপ্তাহের পর আবার তাদের রক্ত সংগ্রহ করে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়েছে।
সামসুজ্জামান বলেন, গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রথম ডোজ নেয়ার চার সপ্তাহ পর ৪১% মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। আর দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার দুই সপ্তাহ পর ৯৩% অংশগ্রহণকারীর দেহে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে গত ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান কর্মসূচী শুরু হয়। ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আমদানি করে এই কর্মসূচী চলে।
এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জনকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ এবং ৪২ লাখ ৮১ হাজার ৭৬৭ জনকে করোনাভাইরাসের দুটি ডোজই দেয়া হয়েছে।
তবে যেসব অংশগ্রহণকারীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তাদের কেউই টিকা নেয়ার আগে কোভিড আক্রান্ত হননি। সামসুজ্জামানের ভাষায়, তাদের কোন কোভিড হিস্টরি ছিল না।
প্রধান গবেষক সামসুজ্জামান বলেন, এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৫% ছিলেন যারা টিকা নেয়ার আগে কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়নি।
ডা. এস এম সামসুজ্জামান বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়ার পর কারো মধ্যেই উল্লেখযোগ্য কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, ৬০-৭০% অংশগ্রহণকারীর মধ্যে টিকা নেয়ার পর হালকা গলা-ব্যথা, ৩০% এর মধ্যে শরীর ব্যথা এবং ৩০% এর মধ্যে জ্বরের উপসর্গ দেখা গেছে।
তিনি বলেন, বড় ধরণের কিছু: যেমন রক্ত জমাট বাঁধা, এগুলো কিছু হয়নি।
এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জনকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র শনিবার জানিয়েছে, কোভ্যাক্সের আওতায় তারা বাংলাদেশকে মডার্নার ২৫ লাখ ডোজ টিকা দিবে।
করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ।
কারণ বাংলাদেশ ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা কেনার জন্য চুক্তি সম্পাদন করলেও সিরাম এ পর্যন্ত মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে সরবরাহ করেছে।
ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে সিরাম আর কোন টিকা না দেয়ায় গভীর সংকটে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপর চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা সূত্র থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চালায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে চীন থেকে উপহারের ছয় লাখ ডোজ টিকা এসেছে।
আর এবার টিকা সরবরাহের বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ২৫ লাখ টিকা দেয়ার কথা জানালো যুক্তরাষ্ট্র।