করোনা পরীক্ষা: টেকনোলজিস্ট সংকট ও সমন্বয়হীনতায় বাড়ছে ভোগান্তি!
নিজস্ব প্রতিনিধি
আরটিএনএন
বরিশাল: বরিশালে টেকনোলজিস্ট সংকটের কারনে করোনা উপসর্গ থাকা রোগীদের সেবা প্রদান বিলম্বিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর একই কারণে কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম। এর ফলে বিপাকে পড়েছেন বরিশাল নগরীর বাসিন্দারা।
যদিও সিটি করপোরেশেনের স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রাখার পর থেকে রোগীরা নগরীর ভিতরে থাকা শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল ও জেনারেল (সদর) হাসপাতালের শরণাপন্ন হচ্ছেন।
তবে অভিযোগ রয়েছে শেবাচিম হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক রোগীদের পরামর্শ দিলেও বিভিন্ন অযুহাতে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার নমুনা প্রদানের জন্য জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে রোগীরা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে দৌড় ঝাপ করতে গিয়ে নানান ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বরিশাল নগরীর মুন্সি গ্যারেজ এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, তিনি কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। সুস্থ না হওয়ায় তিনি বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে যান। সেখান থেকে করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এরপর একই হাসপাতালে নমুনা দিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, সেখানে ওইদিনের নির্ধারিত পরিমাণে নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে গেছে, তাই তারাই তাকে সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আর গত কয়েকদিন ধরে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহিঃবিভাগের টিকিট নিয়ে রোগীরা নমুনা দেয়ার জন্য জেনারেল হাসপাতালে আসছেন বলে জানিয়েছেন টেকনোলজিস্ট মো. নওয়াব।
তিনি জানান, মাত্র ১ জন টেকনোলজিস্টের পক্ষে প্যাথলজির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি একসাথে অনেক রোগীর নমুনা সংগ্রহ করাটা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ঢাকা মেডিকেল শুধুমাত্র ভর্তি রোগী ও তার চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করছে। কিন্তু সেখানে বরিশালের আপামর জনতার কথা চিন্তা করে আমরা এর বাহিরের রোগীদেরও করোনা পরীক্ষা আমরা করছি। আর তা করতে গিয়ে সক্ষমতার দ্বিগুন নমুনা সংগ্রহ এ হাসপাতালে প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে। মঙ্গলবারও ৮৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশন ও পুলিশ হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহের দায়িত্বরতরা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পরই এ হাসপাতালের ওপর বাড়তি চাপ বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন সক্ষমতার অধিকের অধিক নমুনা সংগ্রহ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, তাই কিছু লোক জেনারেল হাসপাতালে যাচ্ছে। পুরতান অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী এ হাসপাতালের ৭ জন টেকনোলজিস্টের স্থলে রয়েছে ৫ জন। যারমধ্যে একজনকে দিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজটি করানো হচ্ছে। এছাড়া দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ৪ জন সেচ্ছাসেবক দেয়া হয়েছে নমুনা সংগ্রহনের কাজে, যাদের যাবতীয় ব্যয় আমরাই বহন করছি।
একজন নমুনা সংগ্রহকারীকে দিয়ে তিন শিফটে কাজ করানো সম্ভব নয় জানিয়ে পরিচালক বলেন, আর এ মুহূর্তে প্রধান নমুনাসংগ্রহকারী বিভূতি ভূষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে এ হাসপাতালের অবস্থা কি হবে তা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
এদিকে সিটি করপোরেশনের ডা. শুভ্র খন্দকার বলেন, মেয়রের নির্দেশে শুরু থেকেই নগর স্বাস্থ্য বিভাগ সরাসরি ছাড়াও অনলাইন ও মোবাইলে করোনা উপসর্গ থাকা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। তবে সম্প্রতি আমাদের ৩ জন টেকনোলজিস্টের করোনা পজেটিভ হওয়ায় নমুনা সংগ্রহ কাজটি বন্ধ রয়েছে। তারা সুস্থ হলে আবারো এ কাজ শুরু হবে।
বরিশাল জেলার সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, মূলত গোটা জেলায় টেকনোলজিস্টের সংকট রয়েছে। বরিশালের ১০টি উপজেলার মধ্যে জেনারেল হাসপাতালসহ ৭টি স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ৭জন টেকনোলজিস্ট রয়েছে। করোনার নমুনা সংগ্রহ করার জন্য ওই তিন উপজেলায় অন্য স্টাফদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিকল্পভাবে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, শেবাচিম থেকে সম্প্রতি যে রোগীদের নমুনা দেয়ার জন্য জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে, তাদের আমরা ফিরিয়ে দিচ্ছি না। তবে একজন টেকনোলজিস্টের পক্ষে এ চাপ নেয়া সম্ভব না।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, নতুন একজন টেকনোলজিস্ট বরিশাল জেলা সিভিল সার্জনকে দেয়া হয়েছে। সে তার সুবিধামতো জায়গায় প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করবেন। যদিও বর্তমান সংকট মোকাবিলায় পাস করা অনেক টেকনোলজিস্ট দিয়ে আপাতত সেচ্ছাসেবক হিসেবে কিংবা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করানোর পরামর্শ সুশীল সমাজের।