মেয়েদের কি আগের চেয়ে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে?
নিউজ ডেস্ক
আরটিএনএন
ঢাকা: কর্মজীবনে সফল আরও অনেক নারীর মতো সিমোন রামোস বুঝতে পারেন তাকে শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছাতে হলে পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে।
সিমোন রামোস বেশ উচ্চপদে কাজ করেন। একটি আন্তর্জাতিক ইনস্যুরেন্স গ্রুপের রিস্ক ম্যানেজার। তিনি বলেন, ইনস্যুরেন্স ব্যবসায় পুরুষদেরই প্রাধান্য। কাজেই এরকম একটি সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে তাকে ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে শক্ত হতে হয়েছে এবং প্রতিদিন সাধ্যের অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার
তিনি বলেন, কর্মজীবনের একেবারে শুরুতেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমাকে অনেক দেরিতে অফিস থেকে বেরুতে হবে, আমাকে অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হবে, আমাকে পুরুষদের তুলনায় তিনগুণ বেশি চেষ্টা করতে হবে নিজেকে যোগ্য প্রমাণের জন্য।
সিমোন রামোজ ব্রাজিলের এসোসিয়েশন অব উইমেন ইন ইনস্যুরেন্স মার্কেট নামের একটি সংস্থার উপদেষ্টা। এ বিষয়ে তিনি একটি বই লিখছেন, যেটি অক্টোবরে প্রকাশিত হবে। কম বয়সী মেয়েদের প্রতি তার উপদেশ হচ্ছে: কেউ যদি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন, মনোযোগী হন এবং সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন, তাহলে তিনি অবশ্যই শীর্ষে পৌঁছাতে পারবেন।
তবে আরও অনেক বিশেষজ্ঞের মতো, তিনিও উদ্বিগ্ন। তিনি মনে করেন, এই মহামারীর সময় নারীর কেরিয়ারের ওপর যে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হচ্ছে, সেটি তাদের আবার পেছনে ঠেলে দিতে পারে।
দ্বিতীয় শিফট
যেসব পরিবারে বাবা-মা দুজনকেই এখন ঘরে বসে কাজ করতে হচ্ছে এবং একই সঙ্গে ঘরেই ছেলে-মেয়েদের স্কুলের পাঠ দিতে হচ্ছে, অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনকে দেখাশোনা করতে হচ্ছে, সেখানে পরিস্থিতি আসলেই বেশ কঠিন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, যে কাজের জন্য কোন পারিশ্রমিক মেলে না, সেরকম কাজের তিন চতুর্থাংশ এখনো মেয়েদেরই করতে হয়।
ব্রিটিশ অনলাইন নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী জাস্টিন রবার্টস বলেন, শিশুদের যত্ন এবং গৃহস্থালি কাজের বড় বোঝাটা যে এখনো মায়েদেরকেই টানতে হয়, এটা তো কোন গোপন ব্যাপার নয়।
তাঁর মতে, এই বাস্তবতা নারীর ওপর আরও চাপ তৈরি করছে।
মায়েদের মধ্যে যে দুশ্চিন্তাটা কাজ করছে তা হলো- তারা সাধারণত যতটা ভালোভাবে কাজ করতে পারে, ততটা ভালোভাবে তারা করতে পারছে না, ফলে তারা ছাঁটাই হতে পারে বা সমস্যায় পড়তে পারে এমন আশংকা তৈরি হয়েছে।
আর তাদের চাকরি বা আয় যদি নিরাপদও থাকে, অনেকে বলছে এভাবে তারা বেশিদিন চালিয়ে নিতে পারবেন না।
রামোস বলেন, মেয়েরা কর্ম ক্ষেত্রে তাদের কাজ শেষ করার পর বাসায় ফিরে তাদের কিন্তু সাধারণত দ্বিতীয় একটা শিফট শুরু করতে হয়।
তিনি বলছেন, যত নারীকে তিনি চেনেন তাদের সবাইকে এখন এই দুইটা শিফটকে একসঙ্গে চালাতে হচ্ছে এবং এর ফলে তাদের উপর একটা বিরাট বড় মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। অনেকে এমনকি এই মহামারির সময় তাদের কাজ ছেড়ে দেয়ার কথা পর্যন্ত ভাবছেন।
সেকেলে কর্মক্ষেত্র
অ্যালিসন জিমারম্যান হচ্ছেন ক্যাটালিস্ট নামের একটি আন্তর্জাতিক এনজিও পরিচালক। এই প্রতিষ্ঠানটি বড় বড় কর্পোরেশনের সঙ্গে মিলে কাজ করছে যাতে মেয়েদের জন্য কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ আরও ভালো করা যায়। তিনি বলছেন আমাদেরকে আসলে খুব গভীরভাবে ভাবতে হবে কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের অভিজ্ঞতা আসলে কি।
এই পুরো সিস্টেমটা আসলে খুব বেশি সেকেলে এবং যখন আপনি জিনিসটা একটু ভালোভাবে দেখবেন, তখন বুঝতে পারবেন যে, কর্পোরেশনগুলোর আসলে উচিত নিজেদের স্বার্থেই কর্মক্ষেত্রে একটা নতুন স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করা।
ক্যাটালিস্ট বহু বছর ধরে দশ হাজার এমবিএ গ্রাজুয়েটের কেরিয়ার পর্যবেক্ষণ করছে। এদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয়েই আছে। এরা পাস করে বেরিয়েছে এশিয়া, কানাডা, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সব নামকরা বিজনেস স্কুল থেকে।
এই গবেষণায় তারা দেখতে পেয়েছেন যে ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক অপশনের অভাবে মেয়েদের ক্যারিয়ার কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে তারা মা হওয়ার পর।
তবে এর বাইরেও অনেক সুপ্ত বৈষম্য রয়েছে যেগুলো মেয়েদের কেরিয়ারের অগ্রগতি থামিয়ে দেয়, তাদের সন্তান থাক বা না থাক তাতে কিছু আসে যায় না।
যেমন ক্যাটালিস্ট এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, এমবিএ পাশ করে বেরোনোর পর প্রথম চাকরিতে মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় অনেক নিচের স্তর থেকে শুরু করে। আর পুরুষরা যখন অফিসে অনেক লম্বা সময় ধরে কাজ করে সেটা তাদের কেরিয়ারে সহায়ক হয়। কিন্তু মেয়েদের বেলায় সেটা ঘটে না।
যখন কোন পুরুষ গ্রাজুয়েট তার চাকরি বদল করে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়, সাথে সাথে তার বেতন বাড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু মেয়েদের বেলায় এটি ঘটে না ।তাদেরকে আগে ম্যানেজারের কাছে প্রমাণ করতে হয় যে তারা এর যোগ্য।
মিজ জিমারম্যান বলেন, মেয়েদেরকে প্রতিনিয়ত তাদের দক্ষতা বাড়াতে হয়। আর পুরুষদেরকে কেবলমাত্র তাদের সম্ভাবনা দেখেই প্রমোশন দিয়ে দেয়া হয়।
এরকম একটা ধারণা বাইরে প্রচলিত যে পুরুষরা যা করছে ঠিক সেটাই যদি মেয়েদের করতে দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়, সেটা একটা বিরাট অগ্রগতি। কিন্তু বাস্তব সত্য আসলে তা নয়।
মেয়েদের বেলায় অনেক বেশি উচ্চ মানের কাজ আশা করা হয় পুরুষদের তুলনায় এবং এটা এক ধরনের বৈষম্য।
অর্থনৈতিক সংকটে পরিস্থিতি আরও জটিল
যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় বলা হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এই ধরনের বৈষম্য আরও জোরালো-ভাবে ফিরে আসছে।
একটি প্রকাশিতব্য গবেষণায় বলা হচ্ছে মেয়েরা যখন বড় বড় কোম্পানির বোর্ড অফ ডিরেক্টরস এর মতো জায়গায় যোগ দিতে যাচ্ছে তখন এটা আরও বেশী কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ বেশিরভাগ কোম্পানি এখন অর্থনৈতিক সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে।
এই গবেষণায় ২০০৩ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এক হাজারের বেশি পাবলিক লিস্টেড কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডের নির্বাচন বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষকরা দেখেছেন, যখন সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলে, তখন শেয়ারহোল্ডাররা সাধারণত নারীদের নিয়ে খুশি থাকেন।
কিন্তু যখন কোম্পানিগুলো সংকটে পড়ে তখন তারা বোর্ড অফ ডিরেক্টরস এর মতো জায়গায় মেয়েদের নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধান্বিত থাকেন এবং তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন।
এরকম পরিস্থিতিতে পুরুষদের কাছে যে ধরনের দক্ষতা আশা করা হয় মেয়েদের বেলায় প্রত্যাশা তার চাইতে অনেক বেশি। এর ফলে অনেক মেয়ে কোম্পানি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক কোরিন পোস্ট বলেন, এটার অন্য কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া কঠিন। এর একমাত্র ব্যাখ্যা হচ্ছে বৈষম্য।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অর্জুন মিত্র বলেন, অনেক কোম্পানি তাদের মেধাবী নারীকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করছে না বা অবমূল্যায়ন করছে। অথচ এসব কোম্পানি এই নারী নেতৃত্ব থেকে লাভবান হতে পারত।
নিম্নআয়ের নারীদের উপর প্রভাব
গত পঞ্চাশ বছরে বিশ্বে লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিরাট বড় অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য সেটা পুরোপুরি মোচন করতে গেলে আরও অন্তত এক শতাব্দীর সময় লাগবে বলে বলছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম।
নিম্নআয়ের নারীদের বেলায় এই বৈষম্য এখনই চোখে পড়তে শুরু করেছে।
করোনাভাইরাস মহামারির পর যে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে, তাতে পুরুষদের তুলনায় মেয়েরাই বেশি কাজ হারিয়েছেন। কারণ এই সংকট সেই সব সেক্টরেই আসলে বেশি প্রভাব ফেলছে, যেখানে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বেশি। যেমন, হসপিটালিটি, খাদ্য এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাত।
যেমন সেন্ট্রাল আমেরিকায় ৫৯ শতাংশ নারী এসব সেক্টরে কাজ করেন। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ৪৯ শতাংশ। দক্ষিণ আমেরিকায় ৪৫ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে মেয়েদের মধ্যে বেকারত্বের হার পুরুষদের তুলনায় বেশি।
এর আগের সংকট গুলোতে দেখা গেছে যখন মেয়েরা তাদের কাজ হারায় তখন তাদেরকে অনেক বেশি করে পারিশ্রমিকবিহীন সেবা কাজে সময় দিতে হয়। যেহেতু এরকম সংকটের সময় কাজ পাওয়া খুব কঠিন, তখন যে সমস্ত কাজ পাওয়া যায় সেগুলোতে মেয়েদের নেয়া হয়না। পুরুষরা সেগুলো পায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা একথা বলছে।
অনেক দেশে এরকম দৃষ্টিভঙ্গি খুব জোরালো যে, কাজ পাওয়ার বেলায় মেয়েদের চাইতে পুরুষদেরই বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়। ৩৪টি দেশে পরিচালিত এক জরিপের ভিত্তিতে এ কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টার।
লোকজনকে এই জরিপে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের সময় কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষদের বেশি অধিকার থাকা উচিত কিনা।
ভারত এবং তিউনিসিয়ায় প্রায় ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়েছেন।
আর তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিনস এবং নাইজেরিয়ায় ৭০ শতাংশ এই মত সমর্থন করেছেন।
কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, লেবানন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা একই কথা বলেছেন। আর ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া, ইউক্রেন এবং মেক্সিকোতে প্রায় ৪০ শতাংশের কাছাকাছি লোক একই কথা বলেছেন। এই জরিপে বিশ্বজুড়ে এ ধরনের মত সমর্থন করেছেন গড়ে ৪০ ভাগ উত্তরদাতা।
জুলিয়ানা হরোউইটয হচ্ছেন পিউ রিসার্চ সেন্টারের একজন অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর। তিনি বলেন, যেসব দেশে লোকজন মুখে বলে যে তারা লিঙ্গসমতা সমর্থন করে, কিন্তু বিশ্বাস করে যে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীর তুলনায় পুরুষদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিৎ, সেসব দেশে এটা নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব আছে।
তিনি বলেন, মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে গিয়ে দেশগুলো যখন চেষ্টা করছে, তখন এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি মেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলবে।
এক কদম পিছিয়ে দুই কদম সামনে
কিন্তু এসবের প্রভাব যাই হোক, এক সময় এই মহামারি কেটে যাবে এবং মিজ রামোস বিশ্বাস করেন এটি এক নতুন বাস্তবতার পথ খুলে দেবে, যার সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে খাপ খাইয়ে নিতে শুরু করেছে।
লুসিয়ানা ব্যারোস একটি এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানীর প্রধান নির্বাহি, যাদের পোর্টফলিও হচ্ছে একশো কোটি ডলারের বেশি। তিনি বলেন, আমরা হয়তো এক ধাপ পিছিয়ে দুই ধাপ এগিয়ে যাব।
তিনি বলেন, নারীরা এখন আগের চাইতে অনেক বেশি সচেতন তাদের কেরিয়ারের ব্যাপারে। তার মতে, লিঙ্গ সমতার সংগ্রাম এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না।
তিনি বিশ্বাস করেন মহামারি পরবর্তী কাজের বাজারে নিজেদের কেরিয়ায় আঁকড়ে থাকার জন্য মেয়েদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তবে তিনি প্রশ্ন তুলছেন, যেসব কোম্পানিতে এই মেয়েরা কাজ করেন, তারা তাদের এই মেধাকে কতটা মূল্য দেয়।
এই কথার সঙ্গে একমত মিজ জিমারম্যান।
নতুন পাস করে বেরুনো বিজনেস গ্রাজুয়েট মেয়েদের তিনি পরামর্শ দেন, কোন কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার আগে সেটির শীর্ষ পদে কি ঘটছে সেদিকে নজর দেয়ার জন্য।
যখন আপনি চাকরি খুঁজছেন, তখন আপনি কিন্তু একটা নিখুঁত প্রতিষ্ঠান খুঁজছেন না। আপনি অগ্রগতির সুযোগ খুঁজছেন। আপনি যদি দেখেন যে কোন কোম্পানির নেতৃত্ব পর্যায়ে আপনার প্রতিনিধিত্ব করার কোন সুযোগ নেই এবং যদি দেখেন যে কোন কোম্পানি সেই লক্ষ্যে কাজ করছে না, তখন আমি হলে সেই কোম্পানিতে যোগ না দিয়ে অন্য কোথাও কাজ খুঁজবো।