বাংলাদেশি তরুণীকে ভারতে ধর্ষণ, গ্রেফতার ৬


আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আরটিএনএন

ঢাকা: ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার সব আসামি বাংলাদেশি বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে। ওই তরুণীকে পাচারের উদ্দেশে ভারত নিয়ে গিয়েছিল অভিযুক্তরা।

এনডিটিভি ও হিন্দুস্তান টাইমস শুক্রবার জানিয়েছে, ২২ বছরের ওই তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের পর দল বেঁধে ধর্ষণ করে যুবকদের একটি গ্রুপ। তারা সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেয় সামাজিক যোগাযোগ মাধমে। তাদের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে দুজন নারীও রয়েছেন।

নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনায় রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছেন নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাবা।

হাতিরঝিল থানার ওসি মো. আব্দুর রশীদ জানান, টিকটকার হৃদয় বাবুসহ কয়েকজনকে আসামি করে বৃহস্পতিবার রাতে মামলাটি করেছেন মেয়েটির বাবা। এ ঘটনায় ভারতে কয়েকজনকে গ্রেফতারের খবর আমরা গণমাধ্যম থেকে পেয়েছি। তবে অফিসিয়াল চ্যানেলে এখনও ভারতের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

ভারতের বেঙ্গালুরু পুলিশকে উদ্ধৃত করে বৃহস্পতিবার এনডিটিভি জানায়, নির্যাতনের ওই ঘটনাটি ঘটেছে ছয় দিন আগে। বীভৎস কায়দায় নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি দেখার পর প্রথম পদক্ষেপ নেয় আসাম পুলিশ। ওই ভিডিও থেকে পাঁচ নিপীড়কের ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য টুইটারে পুরস্কারের ঘোষণা দেয় তারা।

হিন্দুস্থান টাইমসের খবরে বলা হয়, ওই ভিডিওর উৎস খুঁজতে গিয়ে আসাম পুলিশ জানতে পারে, নির্যাতনে জড়িতরা আছে বেঙ্গালুরুতে। তারপর সেই তথ্য কর্ণাটক পুলিশকে সরবরাহ করে তারা।

পরে বেঙ্গালুরু পুলিশ ওই ভিডিওর সূত্র ধরে ছয়জনকে গ্রেফতার করে।

বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশের কমিশনার কামাল পান্ট টুইটারে জানান, এ ঘটনায় ধর্ষণ, নির্যাতন ও অন্যান্য অভিযোগে একটি মামলা করা হয়েছে ওই ছয়জনের বিরুদ্ধে। তারা সবাই বাংলাদেশি বলে তারা ধারণা করছেন।

ভারতের পুলিশের একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, ভাইরাল ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জেরার ভিত্তিতে রামামূর্তি নগর থানায় ধর্ষণ, অত্যাচার এবং অন্যান্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

পুলিশের ধারণা, ৬ জনই বাংলাদেশের বাসিন্দা। বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার কমল পন্ত জানান, আপাতত যা তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে যে অভিযুক্তরা একই দলের সদস্য। টাকা নিয়ে ঝামেলার জেরে নির্যাতিতার উপর অত্যাচার চালিয়েছে অভিযুক্তরা। নির্যাতিতাও বাংলাদেশি। তাঁকে পাচারের জন্য ভারতে নিয়ে আসা হয়েছিল। আপাতত শীর্ষ আধিকারিকদের নেতৃত্বে তদন্ত চলছে।

ভারতের পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নির্যাতনের শিকার তরুণী বাংলাদেশি। তাকে পাচারের জন্য ভারতে নেওয়া হয়েছিল।

বেঙ্গালুরুর পুলিশ বলেছে, ঘটনার শিকার তরুণী এখন ভারতের অন্য একটি রাজ্যে রয়েছেন। তাকে বেঙ্গালুরুতে নেওয়ার জন্য পুলিশের একটি দল গেছে। তাকে বেঙ্গালুরুতে নেওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার জবানবন্দি নেওয়া হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী ও নির্যাতনকারীদের একজন ঢাকার মগবাজার এলাকার। তবে ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের কেরালায়। সাইবার পেট্রোলের অংশ হিসেবে ভিডিওটি পুলিশের নজরে আসে।

ধর্ষকদের একজনের চেহারার সঙ্গে মগবাজার এলাকার যুবক হৃদয়ের ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট করা ছবির মিল পাওয়া যায়। ফেইসবুক আইডি ধরে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়।

তার মা ও মামাকে ভিডিওটি দেখানোর পর তারা স্বীকার করেন যে ভিডিওতে তার ছেলে রিফাতুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় বাবু রয়েছেন। মগবাজার অধিবাসীদের অনেকেই তাকে চেনেন। হৃদয়ের বয়স ২৬ বছর।

ঢাকার পুলিশ বলছে, হৃদয় ভারতের পুনেতে অবস্থান করার কথা তার পরিবারকে বলেছিলেন। ওই ভিডিওতে নির্যাতনের সময় হৃদয়ের সঙ্গে যাদের দেখা গেছে, তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

ওই তরুণী সম্পর্কে উপ কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ওই তরুণী মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। তিন মাস আগে হঠাৎ করে তিনি নিখোঁজ হন। তার অবস্থান সম্পর্কে কিছু জানে না পরিবার।