আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলেন আইএসবধু শামীমা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আরটিএনএন
ঢাকা: আইনি লড়াইয়ে হেরে গেলেন বহুল পরিচিত আইসিস বধু হিসেবে পরিচিত শামীমা বেগম (২৩)। বৃটিশ সরকার ২০১৯ সালে তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিলস কমিশনে (এসআইএসি) আপিল করেছিলেন। গত নভেম্বরে আপিলের ওপর ৫ দিনের শুনানি হয়েছে। অবশেষে বুধবার আদালত রায় দিয়েছে।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, বৃটেনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এখনও হুমকি শামীমা। তিনি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি কিনা সে বিষয়টি রাজনৈতিক। এটা আদালতের বিষয় নয়। এ জন্য তার বৃটেনে ফেরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর অর্থ তিনি আর ফিরতে পারবেন না।
তবে তার আইনজীবীরা বিচারকের এই রায়ের বিরুদ্ধে কোর্ট অব আপিলে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন।
বুধবার সকালে এসআইএসিতে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন জাস্টিস জে। তিনি বলেন, বিশ্বাসযোগ্যভাবে সন্দেহ করা যায় শামীমাকে যৌনতায় পথভ্রষ্ট করতে সিরিয়ায় পাচার করা হয়েছিল। একই সঙ্গে তার সফরের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলি দায়িত্ব পালনে যৌক্তিকভাবে নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।
তিনি আরও বলেন, এ মামলা নিয়ে যৌক্তিকভাবে বিভিন্ন মানুষের মতামতে পার্থক্য থাকবে।
পূর্ব লন্ডনের একটি স্কুলে পড়তেন শামীমা বেগম। ২০১৫ সালে তার বয়স যখন ১৫ বছর তখন অন্য বন্ধুদের সঙ্গে তিনি পালিয়ে সিরিয়ায় গিয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন আইসিস বা আইএসে যোগ দেন। সেখানে বিদেশিকে বিয়ে করেন। পরপর তিনটি সন্তানের মা হন। কিন্তু একটি সন্তানও বাঁচেনি। তার বিদেশি স্বামীও এখন বন্দি। শামীমা অবস্থান করছেন সিরিয়ার এক শরণার্থী শিবিরে। সেখান থেকে বৃটিশ মিডিয়ার মাধ্যমে নিজের ভুল স্বীকার করে বৃটেনে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু ২০১৯ সালে বৃটেনের তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ তার নাগরিকত্ব বাতিল করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে শামীমা এসআইএসিতে আপিল করেন। এ বিষয়ে সেমি-সিক্রেট কোর্টে শুনানি শেষে বুধবার জাস্টিস জে তার আবেদনকে পুরোপুরি খারিজ করে দেন। এর অর্থ হলো বর্তমানে ২৩ বছর বয়সী শামীমা বেগম বৃটেনে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাকে সিরিয়ার ওই ক্যাম্পেই অবরুদ্ধ জীবন কাটাতে হবে।
শামীমাকে পাচার করা হলেও তিনি জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি-মন্ত্রীদের এমন পরামর্শ পেয়েছে স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিলস কমিশন। এরপর এর বিচারক তাকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি ভিকটিম হয়েছেন এমন শক্তিশালী যুুক্তিতর্ক তার আইনজীবীরা আদালতে উপস্থাপন করেন।
নভেম্বরে আপিলের ওপর শুনানিতে শামীমার আইনজীবীরা যুক্তি তুলে ধরেন যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা বেআইনি। কারণ, শামীমা শিশুপাচারের শিকার হয়েছেন কিনা তা নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাকে প্রলুব্ধ করা হয়েছে এবং যোদ্ধাদের সঙ্গে যুক্ত হতে কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল।
রায়ের উপসংহারে জাস্টিস জে বলেন, কমিশন সিদ্ধান্তে এসেছে যে, বিশ্বাসযোগ্য সন্দেহ আছে, শামীমাকে পাচার করা হয়েছে সিরিয়ায়। তাকে সিরিয়ায় নেয়ার উদ্দেশ্য ছিল শিশু হিসেবে যৌনতায় ব্যবহার করা। একটি শিশু হিসেবে তিনি বৈধ কোনো সম্মতি দিতে পারেন না। তাকে দেশের বাইরে যেতে দেয়ার ক্ষেত্রে দেশের অনেক সংস্থাও যৌক্তিকভাবে দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছে। কারণ, তিনি সীমান্ত অতিক্রম করে তুরস্কে গিয়ে সেখান থেকে সিরিয়া গিয়েছেন।
এসব নিয়ে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও, বিচারক বলেন, যদি শামীমাকে পাচার করা হয়েও থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার ক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন।