সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কোচিং অবৈধ: হাইকোর্ট
নিউজ ডেস্ক
আরটিএনএন
ঢাকা: বাংলাদেশে সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য অবৈধ বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২কে বৈধ বলে রায় এসেছে।
এই নীতিমালার বাইরে গিয়ে সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কেউ শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারবেন না। খবর বিবিসির
কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালাসহ শিক্ষকদের করা কয়েকটি রিটের ওপর শুনানি শেষে এই রায় দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, অ্যামিকাস কিউরিসহ সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে হাইকোর্ট সরকারি স্কুলে কোচিং বাণিজ্য ‘অবৈধ’ বলে রায় দিয়েছেন।
‘ফলে দুদক এই বাণিজ্য নিয়ে অনুসন্ধান করেছিল, সেটাকে বৈধ বলে আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে, পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের নীতিমালা ২০১২ কে বৈধ বলেছে।’
তিনি বলছেন, কোচিং বাণিজ্য বলতে বোঝানো হয়েছে, স্কুল বা কলেজ চলাকালে শিক্ষকরা অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর মতো কোন ধরণের কর্মকাণ্ড করতে পারবেন না।
‘তবে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের কোচিং নিয়ে দুদক যে তদন্ত করেছে, সেটাকে হাইকোর্ট এখতিয়ার বহির্ভূত বলেছে। যেহেতু সেটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই সরকারি কর্মচারীদের জন্য নীতিমালা তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।’
‘তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং করাতে হলে তাদের নিজস্ব পরিচালনা বোর্ড থেকে অনুমতি নিয়ে এবং আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুসরণ করে করতে হবে,’ বলছেন মি. আলম।
শিক্ষকদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এই রায়ে অবাক হলেও তিনি বলছেন, রায়ের পুরো কপি দেখে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
আরো বড় দুর্নীতির দিকে নজর
রায়ের সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের জন্য আরো কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট বেঞ্চ।
দুদকের আইনজীবী খোরশেদ আলম জানাচ্ছেন, আদালত বলেছে এর চেয়েও আরো অনেক গুরুতর অপরাধ আছে, দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে।
‘যেমন হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে, ভূমি অফিসে দুর্নীতি হচ্ছে, কাস্টমসে দুর্নীতি হচ্ছে, পোর্টে দুর্নীতি হচ্ছে। এগুলোয় কমিশনের বেশি নজর দেয়া উচিত, যদিও এই বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ না।’
মামলার ইতিবৃত্ত
কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে স্বপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০১৭ সালে একটি তদন্ত করে।
তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গতবছর ঢাকার মতিঝিল সরকারি বালক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
এরপর ওই নোটিশ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২ বিষয়ে শিক্ষকরা রিট করেন।
আদালত গত বছরের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ওই নোটিশের কার্যকারিতা চার মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি রুল জারি করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করে।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। একজন রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসাবে মতামত দিয়েছেন সাবেক দুই অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামাল।