সর্বোচ্চ ছাড়ে বিক্ষোভ ঠেকাতে চায় সরকার


নিজস্ব প্রতিবেদক

আরটিএনএন

ঢাকা: বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনা চরম বিব্রত সরকার। তাই এই ঘটনায় সারা দেশ বিশেষ করে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ঠেকাতে ব্যাপক তৎপরতা দেখাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ। এক্ষেত্রে সরকারের তরফ থেকে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বুয়েটের ছাত্র হত্যায় সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের যে দায় চেপেছে তা সরকারের উপরেও বর্তাবে।

বিশেষ করে এ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তা, দেশের মানুষের কাছের সরকারে ইমেজ অনেকটা ক্ষুন্ন হবে। তবে প্রভাবের মাত্রা নিয়ে দলের ভেতরে প্রশ্ন রয়েছে।

যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অনেক নেতা মনে করেন, অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাদের রাজনৈতিক পরিচয় কাজে না লাগিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এতে সরকারের ইতিবাচক ইমেজও তৈরি হবে।

তবে ঘটনার যে লৌহমর্ষক বিবরণ মিডিয়ায় এসেছে তা দেশবাসীকে নাড়া দিয়েছে বলেও তারা স্বীকার করছেন।

তারা মনে করছেন, এই হত্যার বিবরণ যা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে তা সারাদেশের সকল শিক্ষার্থী, তরুণ সমাজ এমন অভিভাবকমহল পর্যন্ত নাড়া দিয়েছে। যার মাধ্যমে ছাত্রলীগ এবং সরকার ও সরকারি দলের প্রতি নেতিবাচক চিন্তা করতে হচ্ছে।

এদিকে বুয়েটের আন্দোলন থামাতে সরকারের সর্বোচ্চ ছাড়ের ইঙ্গিতে এরই মধ্যে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ শিক্ষার্থীদের ১০ দফা মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর প্রেক্ষিত বুয়েট ভিসি ঘোষনা ছিল নিম্মরুপ:

ভিসি বলেন, ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক রাজনীতি থাকবে না। তিনি নিজের ক্ষমতাবলে সব ধরনের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেন।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের জন্যও রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন তিনি।

ক্যাম্পাসে র‍্যাগিং তথা সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করার ঘোষণা দেন তিনি। এজন্য একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। যার মাধ্যমে সব ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আলোচিত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুততম করা হবে।

এই হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চলমান তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার এদের ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে আবরার ফাহাদের পরিবারকে একটি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আর চলমান হত্যামামলাটি পরিচালনার সব খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে।

মুলত: এ দাবিগুলো নিয়েই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছিল। আজকের আলোচনা থেকে সবগুলো দাবিই মেনে নেওয়া হলো।

রাজনীতি বন্ধের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নেতাবাচক থাকলেও আজকের ভিসির ঘোষনা থেকে প্রমাণিত সরকার সর্বোচ্চ ছাড় দিতে চাচ্ছে।

সচেতন মহল দাবি করছেন, এই ঘটনার প্রেক্ষিত সৃষ্ট পরিবেশ থেকে বের হতে আওয়ামীলীগকে অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হবে।

আর তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারবিরোধী ও শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে যে কোন ধরনের আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকারি দল আওয়ামীলীগ। বিক্ষোভ থেকে ফিরিয়ে যেকোন ধরনের ছাড় দিতেও প্রস্তুত সরকার। এরই মধ্যে এই ধরনের পদক্ষেপ চোখেও পড়েছে।

সরকারের কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডীল সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক স্বীকার করছেন এই ঘটনার জন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। সেই বিবেচনাতেই এরই মধ্যে সরকার ইমেজ উদ্ধারের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার ছাত্রসংগঠন থেকে বহিঃষ্কারের মাধ্যমে সরকার নিজেদের অবস্থা তুলে ধরেছে বলে দাবি তার।

সরকারের এসব পদক্ষেপের কারণে জনগণের কাছে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ঘটনার ধাপাচাপা দেওয়ার কিছু নাই। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর মনোভাব এবং ইতিমধ্যে নেওয়া ব্যবস্থা জনগণ বুঝতে পেরেছে। দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে পারলেও আরো পরিস্কার হবে।

নিজেদের সংগঠনের নেতাদের এহেন কর্মকান্ডকে নিজেদের দূর্বলতা হিসাবে স্বীকার করলেও আব্বুর রাজ্জাক মনে করেন এরই মধ্যে নেওয়া পদক্ষেপের কারণে খুব বেশি মূল্য দিতে হবে না।

এর আগে আলোচিত দর্জীকর্মী বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় দেশজুড়ে চরম তোপের মুখে পড়ের আওয়ামীলীগ। এবারও জনগনের কাছে নেতিবাচক উপস্থাপনা হলেও এই ঘটনায় সরকারের পদক্ষেপের কারণে সেই অবস্থায় পড়বে না বলে দাবি তার।

এদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় বুয়েটের আন্দোলনকারীদের দাবি কাছে নমনীয় হচ্ছে সরকার তথা কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে পরিস্থিতিকে পাল্টে দিতে চাচ্ছে সরকার।

আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাদের দাবি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার কিছু নাই। কারণ এই ঘটনায় সরকার যা ব্যবস্থা নিয়েছে তা নজিরবিহীন। এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘটনায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রী শীর্ষ দুই নেতাকে সরিয়ে দেওয়া হলো।

তবে তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন, সরকারের সহযোগী সংগঠনগুলোর বেশ নেতার ক্যাসিনো সম্পৃক্ত কার্যক্রমের পরেই এই ঘটনায় তাদের অনেক মূল্য দিতে হবে। দেশজুড়ে সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে তাদের।

আর সমসাময়িক ইস্যুতে কথা বলার ক্ষেত্রে দলের সব পর্যায়েল নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বার্তা পাঠানো হয়েছে। এসব ইস্যুতে কথা বলে নতুন করে সমালোচনা না বাড়াতে বলা হয়েছে।