সাকিব না থাকায় ভালো খারাপ দুটোই হতে পারে


খেলা ডেস্ক

আরটিএনএন

ঢাকা: ম্যাচ ফিক্সিং ঠেকাতে স্থানীয় ক্রিকেট বোর্ডকে আরো সক্রিয় হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফিস।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এবিষয়ে সব বোর্ডের সামনে এগিয়ে আসা ও জোরালো ভূমিকা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খবর বিবিসি বাংলার

তিনি মনে করেন, এর ফলে দুর্নীতি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসির কাজ আরো সহজ হবে।

জুয়াড়ির সাথে যোগাযোগের কথা গোপন রাখার অভিযোগে আইসিসি বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে দুই বছরের জন্যে নিষিদ্ধ করার একদিন পর নাফিস এই মন্তব্য করেন।

শাহরিয়ার নাফিস বাংলাদেশের জাতীয় দলের সাবেক ব্যাটসম্যান। বাঁহাতি এই ওপেনার ২৪টি টেস্ট এবং ৭৫টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। সাকিব আল হাসানের সাথেও দীর্ঘ সময় ধরে তিনি ক্রিকেট খেলেছেন।

তিনি মনে করেন, স্থানীয় পর্যায়ে (যেগুলো আন্তর্জাতিক নয়) টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট বেড়ে যাওয়ার কারণে এধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

আমি এটাকে সমস্যা বলবো না। বলবো এসব টি-টুয়েন্টি লিগের কারণে ভুল লোকেরা (জুয়াড়ি) বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে।

এদেরকে ঠেকানো স্থানীয় ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব বলে মনে করেন শাহরিয়ার নাফিস। ক্রিকেটারদের নিজেদেরও বড় রকমের দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এটা খেলোয়াড়দের নিজেদেরও দায়িত্ব। আপনাকে শেখানো হয়েছে যে এরকম পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। বোর্ড ও আইসিসি খেলোয়াড়দেরকে এসব বিষয়ে অবহিত করছে।

এধরনের ম্যাচ ফিক্সিং ও ক্রিকেট নিয়ে জুয়া ঠেকাতে আইসিসি সম্প্রতি বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। প্রত্যেক ক্রিকেটারকেই তারা উৎসাহিত করে তাদের মোবাইলে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করার জন্য যা সাহায্যের তারা সন্দেহজনক কিছু ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে ও সহজে জানাতে পারেন।

সাকিব আইনগুলোর বিষয়ে জানতেন, তিনি জানতেন তাকে কী করতে হবে, অবশ্যই এরকম কিছু আছে যার কারণে তিনি সেসব করেননি। তবে অবশ্যই সেখানে ইতিবাচক কিছু ছিল।

তিনি বলেন, আমি সাকিবকে আমার ক্যারিয়ারের শুরু থেকে চিনি। আমরা একসাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেছিলাম। তিনি অত্যন্ত সৎ একজন ক্রিকেটার।

সাকিব আল হাসান কেন বুকির সাথে তার যোগাযোগের কথা আইসিসির কাছে গোপন করেছিলেন এবিষয়ে সাকিবের কাছ থেকে এখনও কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

তবে শাহরিয়ার নাফিস বলেন, আমি নিশ্চিত যে তার কাছে এব্যাপারে জোরালো ব্যাখ্যা আছে। তবে হ্যাঁ, সাকিব ভুল করেছেন। এবং আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই কারণ অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে তিনি তার এই ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন।

তবে আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড যা-ই হোক না কেন, আপনাকে সৎ হতে হবে, সৎ ভাবে খেলতে হবে, এবং আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে।

শাহরিয়ার নাফিস মনে করেন, প্রত্যেক খেলোয়াড় যদি দায়িত্ব নেয় তাহলে ক্রিকেট বোর্ড ও আইসিসির পক্ষে এসব ভুল নাম প্রতিরোধ করা সম্ভব - যারা "আমাদের ক্রিকেটকে দুর্নীতিতে ফেলে দিচ্ছে।

শাহরিয়ার নাফিসের মতে সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের এযাবৎ কালের মধ্যে সেরা খেলোয়াড় এবং বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের অন্যতম।

তিনি মনে করেন, এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশেরই নয়, সারা বিশ্বের ক্রিকেটারদের জন্যেও একটি মাইলস্টোন হয়ে থাকবে, কারণ আপনি যদি কোন ভুল করেন, কিম্বা ছোট্ট একটি ধাপ এড়িয়ে যান তাহলেও এর জন্যে আপনাকে বড় মূল্য দিতে হতে পারে।

নাফিস মনে করেন এই ঘটনা থেকে সাকিব আল হাসানের মতো অন্যান্য ক্রিকেটাররাও শিক্ষা গ্রহণ করবেন বলে তার বিশ্বাস।

সাকিব আল হাসানের মতো একজন ক্রিকেটার আগামীতে কমপক্ষে এক বছর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে না পারার কারণে জাতীয় দলের ওপর এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে তিনি মনে করেন।

সাকিবের মতো একজন ক্রিকেটারের খেলতে না পারা দলের জন্যে একটি বড় ধাক্কা। তিনি ব্যাট করেন, বল করেন, ফিল্ড করেন। তিনি দলের অধিনায়ক এবং দীর্ঘ সময় ধরে সেরা খেলোয়াড়। তাকে ছাড়া খেলা আমাদের জন্যে একটু কঠিনই হবে।

তবে তিনি মনে করেন সাকিব আল হাসানকে ছাড়া খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ দলের কিছু লাভও হতে পারে।

বিশ্বকে আমরা দেখিয়েছি যে সাকিব কিম্বা তামিমকে ছাড়াও আমরা জিততে পারি। কিছু কিছু সিরিজের সময় ইনজুরির কারণে সাকিব ছিলো না কিন্তু বাংলাদেশ ভালো খেলেছে।

বাংলাদেশ যখন নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে তখন তামিম ইকবাল চোট পাওয়ার কারণে দলে ছিলো না।

শাহরিয়ার নাফিস মনে করেন, সাকিব আল হাসানের না থাকা বাংলাদেশ দলের জন্যে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এর ফলে আরো অনেক খেলোয়াড়ের সামনে সুযোগও তৈরি হলো।

বাংলাদেশ দলে এখন যেসব তরুণ আর অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছেন তাদেরকে দায়িত্ব নিতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা সবাই আমাদের দেশের জার্সি গায়ে দিয়েছি।