গোলের হিসেবে মেসির চেয়ে এগিয়ে ভারতের সুনীল ছেত্রী!
খেলা ডেস্ক
আরটিএনএন
ঢাকা: বর্তমানে যারা ফুটবল খেলছেন তাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। দুই নম্বরে ছিলেন ভারতের সুনীল ছেত্রী, যিনি বাংলাদেশের সাথে দুই গোল করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ছাড়িয়ে গেছেন লিওনেল মেসিকে।
৩৬ বছর বয়সী এই ফুটবলার ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলারদের একজন। তিনি গতরাতে ভারতকে এনে দিয়েছেন গত ছয় বছরে প্রথম বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জয়।
এই মুহূর্তে আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসির চেয়ে দুটি গোল বেশি আছে সুনীল ছেত্রীর।
মেসির গোল ৭২টি, ছেত্রীর ৭৪টি।
এই পরিসংখ্যান দেখে অনেকে লিখছেন, লিওনেল মেসির চেয়ে এগিয়ে সুনীল ছেত্রী। কিন্তু বাংলাদেশের নামকরা কোচ সাইফুল বারি টিটু তার বিশ্লেষণে বলেছেন এই তুলনাটাই আসলে দেয়া উচিৎ হবে না।
লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন, যেখানে চিলি, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, একুয়েডর এমন সব দলের সাথে খেলেছেন তিনি।
ব্রাজিলের মতো পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সাথে রয়েছে লিওনেল মেসির হ্যাটট্রিক। এছাড়া সুইজারল্যান্ডের সাথেও হ্যাটট্রিক আছে লিওনেল মেসির।
২০১৭ সালে যেবার আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের মূল পর্বে উঠতে ঘাম ঝরে তখন ইকুয়েডরের বিপক্ষে লিওনেল মেসির হ্যাটট্রিকেই দলটি রাশিয়ার টিকিট নিশ্চিত করেন।
২০১৭ ফিফা বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলারের পুরষ্কার, গোল্ডেন বল পান লিওনেল মেসি।
মেসি বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক ফুটবল অ্যাওয়ার্ড ব্যালন ডি অর পেয়েছেন সবচেয়ে বেশি, ছয়বার।
সাইফুল বারি টিটু বলেন, তিনি কোন তুলনাতেই যেতেই চাননা, "আপনি যদি ম্যারাডোনা-পেলের তুলনাও করেন তাতেও আমি বিশ্বাস করি না। আলাদা প্রজন্ম, খেলার ধরন আলাদা।"
তবে ভারতের মতো দেশের একটা খেলোয়াড় যখন মেসির চেয়ে বেশি গোল করেন, সেটা তার একটা অর্জন এমন মত টিটুর।
এটা মানতে হবে। এটা সোজা কথা না।
যখন কেউ নিজ দেশের হয়ে একটা রেকর্ড গড়ে তাদের ব্যাপারে উচ্ছসিত প্রশংসাই করবো। কিন্তু এই তুলনাটা না দেয়াই উচিৎ হবে।
সুনীল ছেত্রী দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলের আইকন। এই অঞ্চলের ফুটবলের প্রতিযোগিতাটা আসলে নিজেদের মধ্যেই হয়। সেখানে ভারত অন্যতম সেরা দল এই জোনের।
সাইফুল বারি টিটু বাংলাদেশের অনেক ক্লাবেরই কোচের দায়িত্ব পালন করেন। আবাহনীর দায়িত্বে থাকাকালীন এশিয়ান পর্যায়ের একটি প্রতিযোগিতায় আবাহনী ও ব্যাঙ্গালুরু যখন মুখোমুখি হয় তখন সুনীল ছেত্রীকে পর্যবেক্ষণ করেন টিটু।
তিনি বলেন, খেলার পরে ড্রেসিংরুম থেকে কিটম্যানের সাথে আইসবক্স টানছিলেন সুনীল ছেত্রী। শুধু খেলোয়াড়ি ব্যাপার না ওর প্রচন্ড বিনয়ও আছে। এটাই ওকে বড় মাপের ফুটবলার বানিয়েছে আজ।
সাইফুল বারি বলেন, প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিজ নিজ পর্যায়ের অর্জনের জন্য সাধুবাদ জানানো প্রয়োজন।
সুনীল ছেত্রীর ফুটবল জীবন
নানা উত্থান ও পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে সুনীল ছেত্রীর ফুটবল জীবন। ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন এই ফুটবলার।
ছয়বার তিনি জিতেছেন অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরষ্কার। ১৬ বছর ধরে চলছে তাঁর আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার।
মোহনবাগানে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তুলনামূলক পাতলা গড়নের সুনীলকে বেগ পেতে হয়েছে একজন স্ট্রাইকার হয়ে উঠতে।
কিন্তু তিনি স্ট্রাইকারের অন্যান্য গুণগুলো দ্রুত রপ্ত করেন।
দ্রুত পজিশন বুঝে নেয়া, বল পায়ে না থাকা অবস্থায় নিজের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাওয়া এবং দলের সদস্যদের ফাঁকা জায়গা পেতে সাহায্য করা।
সুনীল ছেত্রী ইউরোপ আমেরিকাতেও ফুটবল খেলতে যান।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সাবেক দল স্পোটিংয়ের বি দলের হয়ে পাঁচ ম্যাচ খেলেন সুনীল।
তবে তাঁর বিদেশভ্রমণ খুব একটা সুবিধার ছিল না। তবে ফিরে এসে চার্চিল ব্রাদার্সে ধারে খেলার পর মূলত ব্যাঙ্গালুরুর হয়েই ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটান।