আফগানিস্তান-ভারতের পর মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে


নিউজ ডেস্ক

আরটিএনএন

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস ২১০ টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছেন হাজারো মানুষ। আর আক্রান্তের সংখ্যা এত বেশি যে তার হিসেব রাখা দুরুহ হয়ে পড়ছে দিন দিন।

কোভিড-১৯ প্রথম দিকে চীন-ইতালি ও ইরানে দাপট দেখালেও বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায়ও প্রভাব বিস্তার করছে। দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে বর্তমানে মৃত্যুহার বেশি। কোভিড-১৯ এ মৃত্যুহারের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়।

বাংলাদেশে এক সপ্তাহ আগেও করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও সুস্থ হওয়ার হার প্রায় সমান ছিল। করোনা রোগীর সুস্থতার মাপকাঠিতে পরিবর্তন আনার পর থেকে প্রতিদিন সুস্থতার হার বাড়ছে, কমছে মৃত্যুহার। রোববার পর্যন্ত সুস্থতার হার দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের বেশি সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় এই সংখ্যা নেহায়েত কম না।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়েছেন কিংবা মারা গেছেন—এমন পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। কোভিড-১৯ এ ক্লোজড কেস (মীমাংসিত ঘটনা)মানদণ্ডে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে মৃত্যুহার বেশি শুধু ভারত ও আফগানিস্তানের। ভুটান ও নেপালে এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। ফলে এই দুই দেশে সুস্থতার হার শতভাগ।

করোনাভাইরাসে প্রাণহানি ও আক্রান্তদের পরিসংখ্যান রাখা আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানে। দেশটিতে মৃত্যুহার সাড়ে ১৮ শতাংশ। ভারতে মৃত্যুহার ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, পাকিস্তানে সাড়ে ৭ শতাংশ, মালদ্বীপে সাড়ে ৬ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

জাতীয় রোগতত্ত্ব ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর)তথ্যানুযায়ী, রোববার পর্যন্ত দেশে মীমাংসা হয়েছে এমন ঘটনার সংখ্যা ২ হাজার ৮৭৮। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬৫০ জন। সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ১ শতাংশ। আর মারা গেছেন ২২৮ জন। মৃত্যুর হার ৭ দশমিক ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পর প্রথম মৃত্যু হয় দেশে। এরপর থেকে ২ মে পর্যন্ত ৫৬ দিনে সুস্থ হয়েছিলেন ১৭৭ জন। অর্থাৎ গড়ে দৈনিক সুস্থ হয়েছেন ৩ জনের মত। ২ মে পর্যন্ত মারা যান ১৭৫ জন। ওই দিন পর্যন্ত সুস্থতার হার ও মৃত্যুহার প্রায় সমান ছিল।

মানদণ্ডে পরিবর্তন আসায় ৩ মে থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। ওই দিন ৮৮৬ জন সুস্থ হওয়ার ঘোষণা আসে আইইডিসিআর থেকে। নতুন চিকিৎসাবিধি (ট্রিটমেন্ট প্রটোকল) অনুযায়ী, লক্ষণ দেখে রোগীকে সুস্থ বলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে।

আগে ২৪ ঘণ্টায় পরপর দুটি পরীক্ষায় শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত না হলে রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হত। নতুন চিকিৎসাবিধি অনুযায়ী, পরপর তিন দিন প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ছাড়াই জ্বর কমে গেলে এবং কাশি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলে রোগী ছাড়া পাচ্ছেন।

সুস্থতার মাপকাঠিতে বদল আসার পর ৩ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত ৮ দিনে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৪৭৩ জন। এই সময়ে মারা গেছেন ৫১ জন। এর আগের ৮ দিনে অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত মারা যান ৩৫ জন।

আইইডিসিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে সুস্থতার ও মৃত্যুর হার অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। এখন যে হার এটিই স্বাভাবিকের কাছাকাছি চিত্র। এখন সুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়ায় মৃত্যুহার কমে এসেছে।