পৃথিবীর আলো দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে মহাকাশের তারা


নিউজ ডেস্ক

আরটিএনএন

ঢাকা: হাজার হাজার বছর ধরে রাতের আকাশে চলছে তারাদের খেলা। অথচ মহাকাশের শোভা হয়ে থাকা সেই তারা নাকি ‘অদৃশ্য’ হয়ে যেতে বসেছে। শত চেষ্টাতেও আর দেখা যাবে না পৃথিবী থেকে।

শনিবার গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক গবেষণায় সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বলছেন, আলো নিঃসরণকারী ডায়োডসহ বিভিন্ন ধরনের আলোর অতি ব্যবহার রাতের আকাশকে উজ্জ্বল করছে। ফলে দূষিত হচ্ছে রাতের আলো। দৃষ্টি হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে রাতের আকাশে আর তারাদের দেখা যাবে না বলেও আশঙ্কা করেছেন গবেষকরা।

উপরের দিকে তাকালে শুধু ফাঁকা আকাশই চোখে পড়বে। এর বাইরে আর চোখ যাবে না! এলইডির ব্যবহার, রাস্তার অলোকসজ্জা, বাহ্যিক আলোর সীমা ছাড়া ব্যবহারই এর মূল কারণ। যা দিনে দিনে মানুষের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ করে তুলছে। স্বাস্থ্যের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

গবেষণায় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ২০১৬ সাল থেকেই আলোক দূষণ যথেষ্ট খারাপের দিকে এগোচ্ছে। সে সময়ই গবেষকরা জানিয়েছিলেন-বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ আর রাতের আকাশে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি দেখতে পান না।

গত সাত বছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। রাতের আকাশে দূষণ বেড়েছে। একই হারে চলতে থাকলে আগামী দুই দশকের মধ্যে প্রধান নক্ষত্রপুঞ্জগুলোও আর দৃশ্যমান থাকবে না।

গবেষক দলের সদস্য জার্মান সেন্টার ফর জিওসায়েন্সের পদার্থবিদ ক্রিস্টোফার কাইবার জানান, আলোক দূষণ এখন রাতের আকাশকে ১০% হারে উজ্জ্বল করে তুলছে। এটি এমন একটি বৃদ্ধি যা সবার দৃষ্টিশক্তি বিলুপ্তির হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আকাশে থাকা সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রও মানুষ আর খালি চোখে দেখতে পারবে না। হুমকিটি এতটাই তীব্র হবে যে, আজ একটি শিশু জন্মালে সে রাতের আকাশে ২৫০টি তারা দেখতে পাবে। তবে তার বয়স যখন ১৮ হবে তখন সে আকাশে মাত্র ১০০টি তারা খুঁজে পাবে।

রাজকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী মার্টিন রিস বলেছেন, ‘রাতের আকাশ আমাদের পরিবেশের অংশ। পরবর্তী প্রজন্ম যদি রাতের আকাশে তারা দেখতে না পায় সেটি হবে একটি বড় বঞ্চনা। এখন যেমন তারা পাখির বাসা দেখেনি কখনো। উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

মার্টিন রিস, সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন তৈরির মাধ্যমে আলোক দূষণের অভিশাপ মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্ধকার আকাশের জন্য সর্বদলীয় গোষ্ঠী তৈরির মাধ্যমে এই আহ্বান করা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে অন্ধকার আকাশের জন্য মন্ত্রী নিয়োগের প্রস্তাব, অন্ধকার আকাশের জন্য একটি কমিটি তৈরি এবং আলোর ঘনত্ব ও দিকনির্দেশনার জন্য কঠোর মান নির্ধারণ করার প্রস্তাব।

এই পদক্ষেপগুলো একটি বিশাল প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়। যদিও আলো দূষণ সাধারণের জন্য এখনো ততটা হুমকি হয়ে দাঁড়ায়নি, তবুও ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকেই।