মৃত্যুর মুখ থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার কয়েকটি ঘটনা
নিউজ ডেস্ক
আরটিএনএন
ঢাকা: একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরে, ফলাফল হিসেবে সবচেয়ে খারাপ কিছু হবে বলেই ধরে নেয়া হয়। তবে কলম্বিয়ার জঙ্গলে বিমান দুর্ঘটনার ৪০ দিনেরও বেশি সময় পর চার শিশুকে উদ্ধারের ঘটনা বিশ্বকে হতবাক করেছে। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশুদের মাসহ দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মারা গেলেও বেঁচে যায় চার শিশু।
৯, ৪, ১৩ এবং ১ বছর বয়সী সোলেনি, তিয়েন, লেসলি এবং ক্রিস্টিনকে শুক্রবার খুঁজে পায় দেশটির সামরিক বাহিনী। এসময় তাদের মধ্যে পানিশূন্যতা এবং পোকামাকড়ের কামড়ের লক্ষণ দেখা গেলেও তারা ভালো ছিল।
ইতিহাসজুড়ে এমন বেশ কয়েকটি নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে যেখানে কাউকে জীবিত পুনরুদ্ধার অসম্ভব মনে হলেও তা ঘটেছে। উদ্ধারের তেমনই চারটি ঘটনা নিয়ে আজকের আয়োজন-
উরুগুয়ের মন্টভিডিওর ওল্ড ক্রিশ্চিয়ানস ক্লাবের রাগবি খেলোয়াড়দের একটি দল ১৯৭২ সালের ১৩ অক্টোবর বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে একটি টুর্নামেন্ট খেলতে সান্তিয়াগো ডি চিলির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
কিন্তু উরুগুয়ের বিমান বাহিনীর যে বিমানটিতে তারা রওনা দিয়েছিল তা আন্দিজ পর্বতমালায় বিধ্বস্ত হয়।
বিধ্বস্ত বিমানের সঠিক অবস্থান না জেনেও উদ্ধারকারী দলকয়েকদিন ধরে পাহাড় ও বরফের মধ্যে বিমানের অবশিষ্টাংশ এবং যাত্রীদের খুঁজতে থাকে। তবে সফল না হওয়ায় তারা কাজ স্থগিত করে দেয়। সাহায্যের বদলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় মৃত্যুর মুখে।
কিন্তু দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা ৪৫ আরোহীর মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়। যত দিন যেতে থাকে অন্যরাও মারা যেতে থাকে। তাদের মধ্যে তুষারপাতে বিমানের ভেতরে আটকা পড়ে মারা যান আটজন।
বিমানের খাবার ফুরিয়ে গেলে বেঁচে থাকা যাত্রীরা খাবারের জন্য মৃতদের মাংস খাওয়া শুরু করে।
সেই বছরের ডিসেম্বরে রবার্তো ক্যানেসা এবং ফার্নান্দো প্যারাডো নামের দু'জন রাগবি খেলোয়াড় সাহায্যের জন্য দীর্ঘ দশ দিন ধরে হাঁটতে থাকেন। দুর্ঘটনার ৭২ দিন পর পাহাড় থেকে আরও ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
২. মেক্সিকোর অলৌকিক শিশু
সেপ্টেম্বর ১৯, ১৯৮৫। ৮.১ মাত্রার এক বিধ্বংসী ভূমিকম্প আঘাত হানে মেক্সিকো সিটিতে। এর ফলে শত শত ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা ধসে পড়ে। এতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
নিশ্চিতভাবেই সেদিনের ভূমিকম্পে নিহতের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। তবে রেড ক্রসের তথ্যমতে এই সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে ৩ হাজার ৬৯২ থেকে দশ হাজারেরও বেশি।
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে টানা কয়েকদিন কাজ করার পর উদ্ধারকারীরা বেশ কিছু নবজাতককে জীবিত উদ্ধার করতে সমর্থ হয়, যাদেরকে বলা হয়েছিল অলৌকিক শিশু।
তাদের মধ্যে একজন ছিল জেসুস ফ্রান্সিসকো ফ্লোরেস, যিনি ভূমিকম্প পুত্র বা অলৌকিক ছেলে নামে পরিচিত। ভূমিকম্পের সময়ও শিশুটি তার মায়ের গর্ভে ছিল। ভূমিকম্পে বাড়ি ধ্বসে মা মারা গেলেও শিশুটি বেঁচে যায়, কারণ তাকে বাঁচাতে তার দাদী রেজার ব্লেড দিয়ে নিজের মেয়ের পেট কেটে শিশুটিকে উদ্ধার করে।
৩. আমরা ৩৩জন ভালো আছি
২০১০ সালের ৫ আগস্ট চিলির আতাকামা মরুভূমির কোপিয়াপোতে সোনা ও তামার একটি খনি ধসে পড়ে। এতে করে ৩৩ জন খনি শ্রমিক প্রায় ৭০০ মিটার গভীরতায় আটকা পড়ে।
প্রথমদিকে, পুরো দৃশ্যই ছিল হতাশাজনক। কিন্তু খনির মধ্যেই শ্রমিকরা আশ্রয় খুঁজে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবে এই আশা থেকে জীবিতদের জন্য অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়।
আগস্টের ২২ তারিখ, তাদের আশ্রয়স্থলের খোঁজ পাওয়া যায়। একইসঙ্গে আসে এক আশার বার্তা- আমরা ৩৩ জন ভাল আছি।
আটকা পরা শ্রমিকদের পর্যন্ত পৌঁছাতে পাথরের মধ্য দিয়ে ড্রিল করতে হয়েছিল। আর এই কাজে উদ্ধারকারীরা খনন যন্ত্র ব্যবহার করেছিল যাতে করে সেখানে থাকা শ্রমিকদের কোন ক্ষতি না হয়।
এসময় পরিকল্পনা করা হয় ক্যাপসুল আকারের ছোট একটি বগি পাঠানোর যা দিয়ে তাদেরকে একে একে বের করা যাবে।
অবশেষে ৬৯ দিন মাটির নিচে থাকার পর খনি শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়।
৪. থাইল্যান্ডের গুহার শিশুরা
২০১৮ সালের ২৩ জুন থাইল্যান্ডের চিয়াং রাইয়ের উত্তর প্রদেশে ১২ শিশু তাদের ফুটবল কোচের সাথে হাঁটতে গিয়েছিল।
অনুশীলন শেষ হবার পর তারা ধানক্ষেতের মধ্য দিয়ে বাইক চালিয়ে সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়া এক পাহাড়ি এলাকায় যায়।
তাদের গন্তব্য ছিল থাম লুয়াং গুহা। মা সাই পর্বতের প্যাসেজ এবং করিডোরগুলোতে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করা কিশোর-কিশোরীদের কাছে এটি ছিল প্রিয় এক জায়গা।
শিশুরা কেবল তাদের টর্চলাইট নিয়ে গুহায় প্রবেশ করেছিল।
তাদের অবশ্য আর কিছু দরকারও ছিল না। কেননা সেখানে কেবল এক ঘন্টা থাকার পরিকল্পনাই ছিল তাদের। কিন্তু গুহাটি দ্রুত প্লাবিত হয়ে যায় এবং তারা বেরতো হতে পারেইনি বরং তাদের গুহার আরও গভীরে যেতে হয়েছিল যাতে তারা পানিতে না ডুবে যায়।
দলটি গুহার প্রবেশদ্বার থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে পাথর ব্যবহার করেই একটি ছোট পাথরের ওপরে পাঁচ মিটার সমান খনন করে একটি গুহা তৈরি করেছিল, যাতে করে তারা একসঙ্গে ও উষ্ণ থাকতে পারে।
বিভিন্ন দেশ থেকে অভিজ্ঞ গুহা ডুবুরিরা উদ্ধার কাজের জন্য থাইল্যান্ডে যান এবং নয় দিন অন্ধকারে থাকার পর ছেলেগুলো আবার আলোর দেখা পায়।