নিখোঁজ টাইটানের নতুন ধ্বংসাবশেষের সন্ধান


নিউজ ডেস্ক

আরটিএনএন

ঢাকা: আটলান্টিকের গভীরে এখনো নিখোঁজ টাইটান ডুবোযান উদ্ধারে বৃহস্পতিবার সারা দিনে যোগ হয়েছে আরো উন্নত সন্ধান সরঞ্জাম। অল্পক্ষণ আগে আমেরিকান কোস্ট গার্ড জানিয়েছে উদ্ধারকারীরা কিছু ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে, যা এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় এক সংবাদ সম্মেলন করবে কোস্ট গার্ড।

রোববার মূল জাহাজ পোলার প্রিন্সের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার পর ডুবোযান টাইটান সাবমার্সিবলে মজুত অক্সিজেনের সরবরাহ দ্রুত ফুরিয়ে আসা নিয়ে উদ্বেগ আশঙ্কার মধ্যে উদ্ধার অভিযানের গতি ও পরিধি বাড়ানো হয়েছে।

গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানে সক্ষম আরো সরঞ্জাম বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সেখানে পৌঁছেছে। আরো সরঞ্জাম পথে রয়েছে।

উদ্ধার অভিযানে ইতোমধ্যেই কাজ করছে কানাডার নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলরক্ষী এবং নিউ ইয়র্কের বিমান বাহিনী।

জানা গেছে, গভীর সাগরে দূরনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চালিত যান রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকেল যার সংক্ষিপ্ত নাম আরওভি এ রকম দুটি আরওভি ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এর মধ্যে একটি সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে নেমেছে।

আমেরিকান কোস্ট গার্ড জানাচ্ছে কানাডার হরাইজন আর্কটিক জাহাজের সাথে লাগোয়া একটি ডুবোযান সমুদ্রের তলদেশে পৌঁছেছে।

ফরাসি গবেষণা সংস্থা ইফ্রেমে ভিক্টর ৬০০০ নামে তাদের যে আরওভি এই উদ্ধারকাজে মোতায়েন করেছে তা খুবই শক্তিশালী। ফরাসি নৌযান আতালান্তি থেকে এটি পরিচালিত হচ্ছে। এটিও কাজ শুরু করেছে।

ভিক্টর ৬০০০-এর দুটি যান্ত্রিক হাত আছে যেগুলো মূল জাহাজ আতালান্তি থেকে খুবই সূক্ষ্ম ও সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা যাবে, যেমন কাটার কাজে বা আশপাশের জঞ্জাল পরিষ্কার করে এগিয়ে যাওয়ার কাজে।

দু’জন পাইলট আতালান্তি জাহাজের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টা শিফটে কাজ করবেন টাইটান সাবমার্সিবলকে খুঁজে বের করে সেটি উদ্ধারের জন্য। ভিক্টর ৬০০০ ডুবোযানটিতে বিশেষ আলো এবং ক্যামেরা আছে যা তারা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসে দেখতে পাবেন।

ব্রিটেনের জার্সি থেকে জুলিয়েট নামে দ্বিতীয় একটি শক্তিশালী আরওভি ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে। তবে সেটি পৌঁছাতে সময় লাগবে। এই ডুবোযানটি এর আগে আটলান্টিকের তলদেশে ঐতিহাসিক জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে প্রায় ২০০ ঘণ্টা কাজ করেছে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ডাউনিং স্ট্রিটও নিশ্চিত করেছে আমেরিকান কোস্ট গার্ডের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ব্রিটেনের সরকার রয়াল নেভির একটি সাবমেরিন, আরো কিছু অনুসন্ধান সরঞ্জাম, এবং সাবমেরিন যুদ্ধ বিশেষজ্ঞ ও সমুদ্রের নিচে কাজ করার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের উদ্ধার অভিযানে সাহায্যের জন্য পাঠাবে।

আটলান্টিক মহাসাগরে ১০ হাজার বর্গমাইল এলাকা জুড়ে সন্ধান কাজ চালানো হচ্ছে। সমুদ্রের নিচ থেকে ধাক্কার শব্দ পাওয়া গেলেও সন্ধান অভিযানের এলাকা এতটাই বিশাল যে আওয়াজ ঠিক কোন জায়গা থেকে আসছে তা সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ বেশ কঠিন বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন।

এদিকে অক্সিজেনের সরবরাহ দ্রুত ফুরিয়ে আসা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ রয়েছে।

হাজার হাজার ফুট পানির নিচে ২২ ফুট লম্বা একটি যানে অক্সিজেনের অভাবে দম বন্ধ হয়ে যাবার ভয়াবহ আশঙ্কা থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন ওই যানের মধ্যে অক্সিজেনের অবস্থা নির্ভর করছে অনেকগুলো বিষয়ের ওপর।

নিউফাউন্ডল্যান্ডে সেন্ট জন্স মেমোরিয়ান ইউনিভার্সিটির একজন বিশেষজ্ঞ ড. কেন ল্যডেজ বলেছেন, যানটির ভেতর যে সময়সীমা দেয়া হয়েছে তার থেকেও বেশি সময় বেঁচে থাকা নির্ভর করবে কিছুটা পরিস্থিতির ওপরে।

তিনি বলেন,‘ভেতরে তাপমাত্রা কীরকম এবং তারা কতটা অক্সিজেন বাঁচাতে পারছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’

তাদের ঠান্ডায় কাঁপুনি ধরলে অনেক অক্সিজেন খরচ হবে। সেক্ষেত্রে তারা যদি একসাথে জড়াজড়ি করে বসে, তাহলে অক্সিজেন বাঁচানো যাবে।

তিনি বলছেন, অক্সিজেন সরবরাহ ফুরিয়ে যাওয়ার পর শরীরের ওপর তার প্রভাব সাথে সাথে পড়ে না। ‘এটা আলোর সুইচের মত নয় যে সুইচ বন্ধ করলেই বাতি নিভে যাবে! এটা অনেকটা পাহাড়ে চড়ার মত। শরীর যতটা পরিশ্রম করবে তত বেশি অক্সিজেন লাগবে।

তিনি বলছেন ভেতরে কী পরিস্থিতিতে তারা কীরকম আচরণ করছেন তার ওপর নির্ভর করবে অক্সিজেন বন্ধ হবার পর তারা কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারবেন।

ডুবোযানে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। সেটা হলে অক্সিজেনে টান পড়তে পারে বলে তিনি বলছেন। একই সাথে সেক্ষেত্রে নিঃশ্বাসে ছাড়া কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যার থেকে জীবন সংশয় ঘটতে পারে।

বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেলে যানটিতে উষ্ণতা বজায় রাখা যাবে না। ফলে যাত্রীদের হাইপোথারমিয়া হতে পারে, অর্থাৎ তাদের শরীর শীতল হয়ে যেতে পারে।

ড. ল্যডেজ বলছেন, ‘সেটা আর্শীবাদও হতে পারে তাদের জন্য।

‘তাদের শরীর যদি অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে যায় এবং তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তারা বেঁচে থাকবেন সেটা উদ্ধারকারীরা জানেন। শরীরের ভেতর তখন বেঁচে থাকার চেষ্টায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু পরিবর্তন আসবে। অক্সিজেনের ব্যবহারও তখন কম হবে।’

কিন্তু ড. ল্যডেজ বলছেন, এর একটা নেতিবাচক দিকও আছে। তারা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে, এবং ভেতরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে সাহায্য চাওয়ার জন্য ধাক্কাধাক্কি করা বা উদ্ধারকারীদের সাথে যোগাযোগের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন।

তবে আমেরিকার উপকূল রক্ষীবাহিনী বলছেন, এখনো তারা পাঁচজন আরোহীকে জীবিত উদ্ধারের আশা ছাড়ছেন না। তারা বলছেন এই উদ্ধার অভিযান খুবই কঠিন এবং জটিল, তবে খুবই অভিজ্ঞ দলগুলো সম্মিলিতভাবে এই অভিযান চালাচ্ছে। এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদী থাকবেন।

সূত্র : বিবিসি