উগান্ডার একটি স্কুলে বিদ্রোহীদের হামলায় ৪০ জন নিহত


আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আরটিএনএন

ঢাকা: উগান্ডার পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি স্কুলে ইসলামিক স্টেটের সাথে সম্পর্কিত বিদ্রোহীদের হামলায় ৪০ জনের মতো নিহত হয়েছে যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী।

এমপন্ডে এলাকার লুবিরিহা মাধ্যমিক স্কুলে চালানো এই হামলায় আরো আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হামলার কয়েক ঘণ্টা পরেও বেশ কিছু শিশু এখনও নিখোঁজ।

নিহত ছাত্রদের সবাই স্কুলের ছাত্রাবাসে থাকতো বলে জানা গেছে।

গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ডিআরসি- ভিত্তিক উগান্ডান একটি গ্রুপ অ্যালায়েড ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস বা এডিএফকে শুক্রবারে চালানো এই হামলার জন্য দায়ী করা হচ্ছে।

উগান্ডার পুলিশ বাহিনীর একজন মুখপাত্র ফ্রেড এনানগা বলেছেন নিহতদের মৃতদেহ বিভেরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পশ্চিম উগান্ডার কাসেসে এলাকায় এই আক্রমণ চালানো হয়।

এই স্কুলে ৬০ জনের মতো শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে যাদের বেশিরভাগই সেখানে থাকে।

এডিএফ বিদ্রোহীরা একটি ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দিয়েছে এবং খাবার দাবার রাখার একটি গুদামঘর লুট করেছে বলে পুলিশের ওই মুখপাত্র জানিয়েছেন।

হামলাকারীরা ছাত্রাবাসের ম্যাট্রেসে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময়ে তারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

উগান্ডার সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ডিক ওলুম সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন কোনো কোনো শিক্ষার্থী আগুনে পুড়ে মারা গেছে, কয়েকজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন কয়েকজনের মৃতদেহ এতোটাই পুড়ে গেছে যে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে গেছে। এজন্য ডিএনএ টেস্ট করতে হবে।

তিনি বলেছেন স্কুল থেকে যাদের অপহরণ করা হয়েছে তাদের বেশিরভাগই ছাত্রী। ওই এলাকার কয়েকজন অধিবাসীও এই হামলায় নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উগান্ডার সৈন্যরা এডিএফ বিদ্রোহীদের তাড়া করলে তারা গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের দিকে চলে যায়। ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক আফ্রিকার সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম ন্যাশনাল পার্ক যেখানে বহু বিরল প্রজাতির প্রাণী বাস করে।

এডিএফসহ অন্যান্য মিলিশিয়ারা বিস্তৃত এই অঞ্চলটিকে তাদের গোপন আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে।

প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ফেলিক্স কুলাইগে টুইটারে বলেন, বিদ্রোহীদের গ্রুপটিকে ধ্বংস করা এবং অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের জন্য আমাদের বাহিনী শত্রুদের তাড়া করছে।

বিদ্রোহী গ্রুপটিকে পাকড়াও করতে উগান্ডার সেনাবাহিনী বিমান সহযোগে অভিযান পরিচালনা করছে।

এডিএফ বাহিনীর আক্রমণ ঠেকাতে এর আগে উগান্ডা ও ডিআরসি যৌথভাবে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে সামরিক অভিযান চালিয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ধারণা করছে শুক্রবার রাতে স্কুলে আক্রমণ পরিচালনার অন্তত দুদিন আগে থেকে হামলাকারীরা ডিআরসির সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল।

গত সপ্তাহেই উগান্ডার সীমান্তের কাছে ডিআরসির একটি গ্রামে হামলা চালানো হয় যার জের ধরে সেখান থেকে শতাধিক গ্রামবাসী উগান্ডাতে পালিয়ে যায়। এই হামলার জন্যেও এডিএফ বিদ্রোহীদের দায়ী করা হচ্ছে।

সবশেষ যে স্কুলটিতে হামলা চালানো হলো সেটি ডিআরসির সীমান্তের দুই কিলোমিটারের মধ্যে। গত ২৫ বছরে এই প্রথম উগান্ডার একটি স্কুলে এধরনের আক্রমণ চালানো হলো।

এর আগে ১৯৯৮ সালের জুন মাসে ডিআরসি সীমান্তের কাছে এডিএফ বিদ্রোহীরা একটি টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের ছাত্রাবাসে হামলা করলে ৮০ জন শিক্ষার্থী আগুনে পুড়ে নিহত হয়।

ওই ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়েছিল।

এডিএফ গ্রুপটি ১৯৯০-এর দশকে পূর্ব উগান্ডায় গঠিত হয় যারা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ইওভেরি মুসেভেনির বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করে। সরকারের বিরুদ্ধে মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

উগান্ডার সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হওয়ার পর এই গ্রুপটি ২০০১ সালে ডিআরসির নর্থ কিভু প্রদেশে চলে যায়।

এই গ্রুপটির আদর্শগত প্রতিষ্ঠাতা জামিল মাকুলুকে ২০১৫ সালে তাঞ্জানিয়ায় গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনি উগান্ডার কারাগারে আটক রয়েছেন।

এডিএফ বিদ্রোহীরা গত দুই দশক ধরে ডিআরসির ভেতর থেকে আক্রমণ পরিচালনা করছে।

মাকুলুর উত্তরাধিকারী মুসা সেকা বালুকু ২০১৬ সালে ইসলামিক স্টেটের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন বলে জানা যায়। কিন্তু আইএস ২০১৯ সালে ওই অঞ্চলে তাদের তৎপরতার কথা প্রথমবারের মতো স্বীকার করে।

২০২১ সালে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা এবং দেশটির অন্যান্য এলাকায় যেসব আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়েছিল - তার জন্য এই এডিএফ বাহিনীকে দায়ী করা হয়।