সুদানের যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে: জাতিসংঘ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আরটিএনএন
ঢাকা: সুদানের চলমান যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ ও অন্য বেশ কয়েকটি ত্রাণ সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধের কারণে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছে। যারা রয়ে গেছে তারাও খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার অভাবে মারা যাচ্ছে। জাতিসংঘসহ মোট ২০টি বৈশ্বিক সংস্থার প্রধানরা এক যোগে জানান, সুদানের ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। খবর আরব নিউজের
খবরে জানানো হয়, সুদানের নিয়মিত সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যে চার মাস ধরে ভয়ানক লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ে দেশটির রাজধানী খার্তুম ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাতারাতি এই যুদ্ধ শেষ হচ্ছে না এবং সুদান একটি দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, সুদানের কৃষকদের ফসল রোপণের আদর্শ সময় ফুরিয়ে আসছে। এই ফসলই তাদের ও দেশটির প্রতিবেশী দেশগুলোর মানুষদের খাদ্য নিশ্চিত করতো। পাশাপাশি চিকিৎসা সামগ্রীরও অভাব রয়েছে।
সব মিলিয়ে সুদানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাবে এই যুদ্ধের কারণে ১০ লাখ ১৭ হাজার মানুষ সুদান ছেড়ে পাশের দেশগুলোতে পালিয়েছে। ফলে এসব দেশগুলোতে শরণার্থী সংকট সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকটি দেশ নিজেই অর্থনৈতিক সংকটের সাথে লড়াই করছে। এরমধ্যে শরণার্থীর চাপ তারা নিতে পারছে না। দেশ ছেড়ে পালানো বাদ দিয়েও শুধু সুদানের মধ্যেই ৩৪ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন অবস্থায় আছেন। দেশের মধ্যে উদ্বাস্তুতে পরিণত হওয়া এই সুদানিদের কাছে ত্রাণ সাহায্য পাঠানোও কঠিন হয়ে গেছে।
বিদ্যুত, যোগাযোগ ও জলহীন জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। রয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকিও। বহু মানুষ ডাকাতির শিকার হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র এলিজাবেথ থ্রোসেল বলেন, নিহতদের অনেকের দেহাবশেষ সংগ্রহ করা, শনাক্ত করা বা কবর দেওয়া হয়নি। জাতিসংঘ অনুমান করে যে চার হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
গত সপ্তাহের রোববার থেকে দেশের বড় একটি অংশে বিদ্যুৎ নেই। ফলে মোবাইল নেটওয়ার্কগুলিও বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া মৌসুমি বৃষ্টির কারণে ১৩ হাজারের বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। বহু মানুষ যা জলবাহিত রোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এছাড়া সুদানে নারীরা হয়ে পড়ছে অরক্ষিত। ধর্ষণ সহ অন্য যৌন সহিংসতা বাড়ছে। সুদানের নারী ও মেয়েদের জন্য জাতিসংঘ বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের লায়লা বেকার বলেন, আমরা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ৯০০ শতাংশ বৃদ্ধি দেখছি। নারীরা অবিশ্বাস্যভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই ধরনের সহিংসতার শিকার অনেকই শেষে গর্ভবতী হযন। তাদের সহায়তা এবং যত্নের সুযোগ পাচ্ছে না জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, তার কার্যালয় ৭৩ জনের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার ৩২টি ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট পেয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২৮টি ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে। আরএসএফ ইউনিফর্ম পরা পুরুষরা অন্তত ১৯টি ঘটনায় অপরাধী হিসেবে জড়িত ছিল। মামলার প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত অনেক বেশি।