গাজায় বিমান হামলায় ২০জন নিহত, শান্ত থাকতে বিশ্ব নেতাদের আহবান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আরটিএনএন
জেরুজালেম: সোমবার রাতে ফিলিস্তিনিরা জেরুসালেমের উদ্দেশ্যে রকেট ছুড়লে সহিংসতা বাড়তে থাকে। এর জবাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাযা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশ্যে বিমান হামলা করে। এতে কমপক্ষে ২০ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য যত দ্রুত সম্ভব উত্তেজনা কমাতে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
গাযায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এই বিমান হামলায় ২০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশু রয়েছে।
ইসরায়েলি সেনারা বলছে, হামাস গোষ্ঠীর অন্তত তিনজন সদস্য এ সময় নিহত হয়েছে।
সোমবার জেরুসালেমে সংঘর্ষে কয়েকশো ফিলিস্তিনি আহত হওয়ার পর হামাস পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছিল।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস রেড লাইন অতিক্রম করে ফেলেছে এবং ইসরায়েল এর জবাব দিয়েছে শক্ত ভাবে।
গত কয়েক দিনে জেরুসালেমে যে সহিংসতা হচ্ছে, সেটা গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক।
ইসরায়েলি পুলিশ এবং ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের মধ্যকার চলমান সংঘর্ষ আরও বড় ধরণের সহিংসতা উসকে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণ এবং ইহুদিদের পবিত্র স্থান টেম্পল মাউন্টে ফিলিস্তিনিদের যেতে যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ হয়েছে ফিলিস্তিনিরা।
মঙ্গলবার ভোরে ফিলিস্তিনে রেড ক্রিসেন্ট বলেছে যে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে জেরুসালেম এবং পশ্চিম তীরে সংঘর্ষে সাতশো জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে।
বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, হামাসকে অবশ্যই অতি দ্রুত রকেট হামলা বন্ধ করতে হবে । তিনি আরও বলেন, দুই পক্ষকেই শান্ত থাকতে হবে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি একই রকম ভাবে বলেছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সংঘর্ষের ব্যাপারে গুরুতরভাবে উদ্বিগ্ন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব টুইট করে বলছেন যে রকেট হামলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, পশ্চিম তীর, গাযা এবং পূর্ব জেরুসালেমে গুরুতর সংঘর্ষ হচ্ছে, যা তাৎক্ষনিকভাবে বন্ধ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, গাযা থেকে ইসরায়েলের বেসামরিক লোকের উপর যে ভাবে হামলা করা হয়েছে, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য না।
সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠক হলেও কোন বিবৃতি দেয়া হয়নি।
কিন্তু একজন কূটনৈতিক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থাকে বলেছেন যে জাতিসংঘ, মিশর এবং কাতার - যারা ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন - তারা সবাই চেষ্টা করছেন এই লড়াই থামাতে।
সহিংসতা উসকে দিল যে বিষয়গুলো
শনিবারে সহিংসতার শুরু হয় জেরুসালেমের দামেস্ক গেটে যখন ইসলাম ধর্মের পবিত্র রাত লাইলাতুল আল-কদর উপলক্ষে হাজার হাজার মুসলমান আল-আকসা মসজিদে নামাজ আদায় করেন।
এর আগে শনিবার মসজিদ অভিমুখে নামাজীদের নিয়ে যাওয়া অনেক বাস আটকে দেয় ইসরায়েলি পুলিশ। শুক্রবারের সহিংসতার কারণে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
রয়টার্স নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন সাতাশ বছরের মাহমুদ আল-মারবুয়া বলেন, তারা আমাদের নামাজ পড়তে দিতে চায় না। সেখানে প্রতিদিনই লড়াই করতে হচ্ছে, প্রতিদিনই সহিংসতা হচ্ছে। প্রতিদিনই সেখানে সমস্যার তৈরি হচ্ছে।
সহিংসতার পেছনের কারণ
১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকেই পূর্ব জেরুসালেম দখল করে রেখেছে ইসরায়েল। পুরো শহরকে তারা নিজেদের রাজধানী বলে মনে করলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ দেশ তাতে স্বীকৃতি দেয়নি।
ফিলিস্তিনিরা দাবি করে, পূর্ব জেরুসালেম হবে তাদের স্বাধীন দেশের রাজধানী।
ওই এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে, কারণ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের জন্য পূর্ব জেরুসালেমের বাড়িঘর থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার সম্ভাবনায় প্রতিদিনই কলহ তৈরি হচ্ছে।
জাতিসংঘ ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানিয়েছে যেন যেকোনো ধরনের উচ্ছেদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হয় এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতি যেন সর্বোচ্চ সহনশীলতা দেখানো হয়।
জোর করে বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানিয়েছে আরব লীগ।