রাশিয়ার কাছে ২০টি দেশের ১০০ কোটি ভ্যাকসিন তৈরির প্রস্তাব


আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আরটিএনএন

মস্কো: করোনাভাইরাসের প্রথম ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ঘোষণা দেয়ার পর রাশিয়া জানিয়েছে বিশ্বব্যাপী এই টিকা তারা সরবরাহ করবে। ইতিমধ্যে ভারতসহ ২০ দেশ থেকে ভ্যাকসিনের অর্ডার পেয়েছে তারা। এসব দেশ থেকে ১০০ কোটি ডোজের অর্ডার করা হয়েছে।

রাশিয়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করছে গ্যামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব এপিডেমোলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজি। ভ্যাকসিনটির নাম দেয়া হয়েছে স্পুটনিক ভি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন। খবর ইকোনমিক টাইমসের

রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ জানান, বুধবার থেকে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। আর বাণিজ্যিকভিত্তিক উৎপাদন শুরু হবে সেপ্টেম্বর থেকে।

তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী এই ভ্যাকসিন ছড়িয়ে দিতে চায় রাশিয়া। ২০ দেশ থেকে ইতিমধ্যে ১০০ কোটি ডোজের ক্রয়াদেশ পেয়েছেন তারা।

তিনি জানান, বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে ৫০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে চায় রাশিয়া। ভারত ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং কিউবায় ‘স্পুটনিক ভি’ উত্‍পাদন হবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মঙ্গলবার ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, তার মেয়ে এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন, তিনি ভালো আছেন।

সংবাদ সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, পুতিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাস্কোকে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ আপডেট দিতে বলেছেন। একই সঙ্গে পুতিন আত্মবিশ্বাসী, প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে এই ভ্যাকসিনের ক্ষমতা প্রশ্নাতীত। এই ভ্যাকসিন প্রস্তুতের সঙ্গে জড়িত সব কর্মীকেও ধন্যবাদ জানান পুতিন। পুতিনের বিশ্বাস, খুব শিগগির গণহারে এই ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে পারবে রাশিয়া।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশ, অন্তত ৬০ শতাংশ নাগরিকের শরীরে করোনা টিকা দিতে হবে।

প্রাথমিকভাবে যারা করোনার বিরুদ্ধে সামনের সারি থেকে লড়াই করছেন, তাদের প্রথমে এই ভ্যাকসিন দেয়া হবে বলে জানা যাচ্ছে। এদিকে রাশিয়ার এই করোনা ভ্যাকসিন এখনও মানব ট্রায়ালের সব ধাপ উত্তীর্ণ হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের অনেকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে কী বলে, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস।

পুতিন নিরাপদ বলে দাবি করলেও রাশিয়ার তৈরি এই ভ্যাকসিন নিয়ে এখনও নানা মহলে তর্কবিতর্ক চলছে। অনেকেই মনে করছেন, প্রথম হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে তাড়াহুড়ো করা হয়েছে।

কারণ ভ্যাকসিনের প্রথম স্তরের ট্রায়ালের পরেই রাশিয়া দাবি করেছে– ভ্যাকসিন সার্বিকভাবে প্রয়োগের জন্য তৈরি। যেখানে অক্সফোর্ড, মডার্নার ভ্যাকসিন এখনও তৃতীয় স্তরের ট্রায়ালে রয়েছে।

যদিও এই ভ্যাকসিনটির চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পূর্ণ হয়নি বলে সূত্রের খবর। এই পর্যায়ে বিশ্বের বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন বয়সের মানুষের উপর পরীক্ষা করা হয়।

রাশিয়া জানিয়েছে, এই পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য মোট ৫টি দেশকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নাম আছে ভারতেরও। বাকি চারটি হল, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, ব্রাজিল এবং ফিলিপিনস।

দিমিত্রভ জানিয়েছেন, চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালের পর সেপ্টেম্বরেই এই ভ্যাকসিনের ব্যবসায়িক উৎপাদন শুরু হবে। এ বছরের শেষ পর্যন্ত ২০ কোটি টিকার ডোজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তৈরি হবে। রাশিয়ায় তৈরি হবে আরও ৩০ কোটি। এরপর থেকে বছরে ৫০ কোটি ডোজ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন তারা।