পাকাতান হারাপান সরকার অতীতের যেকোনো সরকারের তুলনায় বেশী নারী বান্ধব


আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আরটিএনএন

কুয়ালালামপুর: গত বছর মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে পাকতান হারপান একটি অপ্রত্যাশিত জয় পেয়েছিল যা স্থানীয় নাগরিক সমাজে ব্যাপক প্রভাবে রেখেছে কিন্তু একই সাথে তাদের বিজয় দেশটির ‘Sisters in Islam (SIS)’ নামের মুসলিম নারী অধিকার সংগঠনের জন্যও সুখকর বার্তা নিয়ে এসেছে।

সংগঠনটির ৩২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘Malay Mail কে দেয়া একজন মুখপাত্র বলেন, বর্তমানে পুর্তাজয়া পূর্বের তুলনায় অলাভ জনক সংগঠন এবং মানবাদিকার কর্মী দের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে থাকে।

সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক রোজানা ইসা বলেন, ‘আমারা সরকারের সাথে এক টেবিলে বসে আলোচনা করতে পেরেছি। এর মাধ্যমে আমরা বর্তমানে কি করছি, কোন ধরনের নারীদের সহায়তা দিচ্ছি ইত্যাদি ব্যাখ্যা করে তুলে ধরতে সক্ষম হচ্ছি।’

‘SIS’ এর পক্ষ থেকে তিনি বলেন, অন্যান্য নারী অধিকার দল সমূহের সাথে পুর্তাজয়ার নেয়া লিঙ্গ সমতা আইন পাশের উদ্যোগে সামিল হতে পেরে আমরা গর্বিত।

দেশটির সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় থেকে গত মাসে আইন সভায় বলা হয় যে, তারা জাতিসংঘের ‘Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women’ এর আইন সমূহের বাস্তবায়নে কাজ করবেন।

এর পূর্বে মালয়েশিয়ার বারিসান ন্যাশনাল দলের ক্ষমতার সময় ‘SIS’ অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিল কিন্তু পাকতান হারপান ক্ষমতায় আসার পর সংগঠনটি আবার পুনর্যৌবন প্রাপ্ত হয়েছে।

তারা মুসলিম পারিবারিক আইন যা ‘Islamic Family Law (Federal Territories) Act 1984’ নামেও পরিচিত তার মধ্যে কিছু সংস্কার আনার জন্য সরকারের সাথে আলোচনা করছেন।

রোজানা ইসা বলেন, ‘আমরা এই সাথে দরজায় কড়া নেড়ে একটি আলোচনায় বসার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছি যাতে করে ইসলামি পারিবারিক আইনের সংস্কার কে সামনে এগিয়ে নেয়া যায়।’

সংগঠনটি জানিয়েছে যে, মুসলিম পারিবারিক আইন যখন প্রথমবারের মত মালয়েশিয়ায় পাশ হয়েছিল তখন আইনটি অন্যান্য মুসলিম দেশের সমূহের জন্যও অনুকরনীয় ছিল কিন্তু বেশ কয়েকবার বিশেষত ২০০৬ সালের সংশোধনীর পরে আইনটি নারীদের জন্য বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রোজানা ইসা বলেন, ‘অন্তত এবার এ সম্পর্কে একটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে অবশ্যই আমাদের কথা শোনা হবে।’

‘SIS’ তাদের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিনা মূল্যে আইনি পরামর্শ দেয় এবং সংগঠনটি কিছুদিন পূর্বে দেশটির নারী বিষয়ক মন্ত্রী হান্নাহ এর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ২০,০০০ হাজার রিঙ্গিত অর্থ সহায়তা পায়।

রোজানা ইসা বলেন, ‘এটি সত্যিই অবাক করার মত একটি বিষয়। বিনা অনুরোধ আমরা এমন সহায়তা পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘যদিও এই সহায়তা অর্থের দিক থেকে খুব কম কিন্তু এটি আমাদের উৎসাহ যোগাবে। দীর্ঘ সময়ের পর আমরা পুর্তাজয়া থেকে সহায়তা পেয়েছি।’

নারীদের জন্য সবসময় দরজা খোলা

কিন্তু সংগঠনটি একই সাথে পুর্তাজয়ার কিছু রাজনৈতিক দল থেকে বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে।

মালয়েশিয়ার ইসলামিক দল ‘PAS’ এর ডেপুটি প্রেসিডেন্ট তুয়ান ইব্রাহীম ‘SIS’ এর প্রতি অর্থ সহায়তার সমালোচনা করে সংগঠনটিকে ‘বিতর্কিত’ বলে মন্তব্য করেন এবং সংগঠনটিকে মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিকারী বলে আখ্যায়িত করেন।

রোজানা ইসা বলেন, ‘আমাদের মত লোকজন যারা নারীদের অধিকার আদায়ে কাজ করছে তাদের এ পথ থেকে সরিয়ে দেয়া সত্যিই খুব সোজা। কিন্তু আমি বলতে চাই যে, আমরা টিকে থাকবো।’

সংগঠনটি জানায় যে, তারা গত বছর অন্তত ৫৭৬ জন নারী কে আইনি সহায়তা প্রদান করেছেন এবং তাদের বেশীরভাগ এসেছিল সেলানগোর এবং কুয়ালালামপুর থেকে এমনকি তারা বিদেশ থেকে আসা ১৬ জন কে সহায়তা দিয়েছিলেন।

২০০৩ সাল থেকে সংগঠনটি অন্তত ৪,৪০০ জন মানুষকে আইনি সহায়তা দিয়েছে বলে জানা যায়।

এসব আইনি সহায়তার বেশীরভাগই দেয়া হয়েছে এমন নারীদের কে যাদের স্বামী তাদের ভরণ পোষণ দিতে অস্বীকার করেছিলেন।

রোজানা ইসা বলেন, ‘নারীরা আমাদের নিকট আসে আর আমরা তাদের সব কথা শুনে থাকি। আমরা তাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী সবকিছু বিচার করি না।’

‘আমি মনে করি আমাদের এমন সহজ কার্যক্রমের কারণেই নারীরা এখানে আসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।’

নারীরা পূর্বের মত অবহেলার পাত্র নয়

১৯৮৭ সালে ‘SIS’ প্রতিষ্ঠা হয় যার সাথে আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, পরিসংখ্যানবিদ এবং মানবাধিকার কর্মী গন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছেন এবং সংগঠনটি কখনো তার উদ্দেশ্য থেকে পিছ পা হয় নি।

উদাহরণ সরূপ ১৯৯১ সালে সংগঠনটি ‘Are Women & Men Equal Before Allah? ‘ এবং ‘Are Muslim Men Allowed to Beat Their Wives?’ নামে দুটি পুস্তিকা প্রকাশ করে যা সেসময় দেশটিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

এর পর থেকে সংগঠনটি নারী অধিকার নিয়ে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

রোজানা ইসা বলেন, ‘আমরা আমাদের বক্তব্য দেয়ার অধিকার দাবী করি। আমরা একই সাথে অন্যান্য নারীদের জীবনের অভিজ্ঞতা সমূহ অন্যদের জানাতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পেছনে ফিরে যাবো না। সম্ভবত এটিই আমাদের নেয়া সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।’

তথাপি রোজানা মালয়েশিয়ায় নারী অধিকার নিয়ে কথা বলা অনেক মানবাধিকার কর্মীর উপর দমন পীড়নের সমালোচনা করেন বিশেষত সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ‘Women’s March’ নামের একটি পথ সভার উপর পুলিশের আক্রমণ কে তিনি ন্যক্কার জনক বলে আখ্যায়িত করেন।

মুসলিম পারিবারিক আইনের সংস্কার চাওয়ার পাশাপাশি সংগঠনটি একই সাথে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাদের সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য মালয়েশিয়ার নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে থাকে। সংগঠনটি বিশেষত মালয়েশিয়ার বৈষম্য মূলক বিভিন্ন আইন এবং নীতি যা মুসলিম নারীদের প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে সেগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

রোজান ইসা বলেন, ‘আমরা যে ভাবে কাজ করি এবং আমাদের প্রতি যে সব নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয় তা মূলত আমাদের কণ্ঠকে আরো বেশী উচ্চতায় নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘কারণ আমরা যা বলতে চাই তারা তা শুনতে চায় না। এসবের মোকাবেলায় যে কোনো মূল্যে আমাদের কে আমাদের কথা বলা চালিয়ে যেতে হবে।’

সূত্র: মালয়মেইল ডট কম।