মায়ামির ধসে পড়া ভবনের ‘বড় ত্রুটি’ আগেই জানানো হয়েছিল


আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আরটিএনএন

ঢাকা: ফ্লোরিডার মায়ামিতে যে ভবনটি ধসে পড়েছে সেটায় বড় ধরনের ত্রুটি পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৮ সালের একটি তদন্তে উঠে এসেছে।

সমুদ্রের তীরবর্তী চ্যাম্পলেইন টাওয়ারের নিচে পানি নিষ্কাশনের জায়গায় ত্রুটি দেখা গেছে, বলা হয়েছিলো তিন বছর আগে ইঞ্জিনিয়ারদের তৈরি করা প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদন সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলার

বৃহস্পতিবার যখন ভবনটির বেশিরভাগ বাসিন্দাই ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ে।

যদিও পাঁচজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ১৫৯ জনকে জীবিত পাওয়ার আশা ক্রমশই কমছে।

ধ্বংসস্তুপের নিচে আগুন লেগে যাওয়ায় শনিবার উদ্ধারকাজেও বিপত্তি ঘটে।

মায়ামি-ডেডের মেয়র ড্যানিয়েলা লেভাইন কাভা বলেন, আগুনের হলকা ছিল বেশ গভীর এবং উদ্ধারকর্মীদের ব্যাপক ঝক্কি সামলাতে হয়।

দুর্ঘটনার পর ভবনটি নিয়ে একের পর এক নথি বের হয়, যার মধ্যে ছিল ভবনটির কনসালটেন্টদের একটি প্রতিবেদন।

ইঞ্জিনিয়ার ফ্রাঙ্ক মোরাবিটো বলেন, যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল না।

তার রিপোর্টে বলা হয়েছে, আসল চুক্তির কাগজে এই পদ্ধতিগত ইস্যুটির উল্লেখ ছিল, যেটা পুরো ঘটনার শুরু হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সুইমিংপুলের নিচের সিমেন্টের ভিত্তিকে তিনি বড় ধরনের কাঠামোগত বিপর্যয় হিসেবে দেখছেন।

পানি বের হওয়ার যথাযথ জায়গা না থাকাটা একটা বড় ধরনের কাঠামোগত ত্রুটি।

তিনি লিখেছিলেন, পানি বের হতে না পেরে খুব শীঘ্রই কংক্রিটের অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে এবং এই কাঠামো প্রসারিত হতে থাকবে।

এই ইঞ্জিনিয়ার পার্কিং গ্যারেজের দিকে কলাম, বিম ও দেয়ালে প্রচুর ফাটলের কথাও উল্লেখ করেছেন।

৪০ বছর পুরনো এই বিল্ডিং যে সহসাই ধসে পড়বে এমন কিছু ছিল না রিপোর্টে, কিন্তু কংক্রিটের যেসব জায়গায় অবনতি হয়েছে সময়মতো ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ ছিল।

প্রতিবেকরা বলছেন, এটা নিশ্চিত নয় যে কোন মেরামতের কাজ হয়েছে কী হয়নি, কিংবা এই কাঠামোগত বিপর্যয়ের পেছনে রিপোর্টে উল্লেখ করা কোন কারণই দায়ী কি না।

চ্যাম্পলেইন টাওয়ার্সে এই বছর লাখ লাখ ডলারের একটা সংস্কার কাজ হওয়ার কথা ছিল।

ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিসান্টিস কথা দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ অবশ্যই প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করবে, এর দ্বারা যারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আহত হয়েছেন সরাসরি তারা উত্তর চায়।

শনিবার উদ্ধারকারী দলগুলো কাজ চালিয়ে গেছে। উদ্বিগ্ন আত্মীয়স্বজনের উৎকন্ঠা ছিল।

র‍্যাচেল স্পিয়েগাল নামের একজনের মা ছিলেন ছয় তলায়। তিনি বার্তাসংস্থা এপিকে বলেন তারা মিরকলের অপেক্ষায় আছেন।

জিম উগার্ট আশা ছেড়ে দিয়েছেন, তিনি আর মনে করেন না তার দীর্ঘদিনের বন্ধু বেঁচে আছেন। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে।

নানা ধরনের যন্ত্রপাতি, ড্রোন ও বিশেষ উপায়ে প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করা হচ্ছে।

মায়ামি-ডেডের সহকারী আগুন নিয়ন্ত্রন প্রধান রেইড জাডাল্লাহ বলেন, কোন শব্দ পেলেই আমরা সেই জায়গায় মনোনিবেশ করছি। হতে পারে এটা লোহার শব্দ হতে পারে ধ্বংসাবশেষ ক্ষয়ে পড়ছে। সুনির্দিষ্টভাবে মানুষের পায়ের আওয়াজ অথবা মুখের শব্দ নাও হতে পারে।

উদ্ধারকারীরা পালাবদল করে করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, খুবই সীমিত সংখ্যায় মানুষ সেখানে থাকতে পারছেন। এটা করা হচ্ছে যাতে আবার কোন দুর্ঘটনা না হয়।

মেক্সিকো ও ইসরাইল থেকেও উদ্ধারকারী দল সাহায্য করছে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফ্লোরিডার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ এই সময়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি রাজ্যের বিভাগগুলোকে সাহায্য করবে ত্রাণ দিয়ে।

সার্ফসাইডের মেয়র চার্লস বারকেট বলেন, উদ্ধারকারীরা সব ধরনের চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে, আমাদের কোন কিছুর সংকট নেই, আমাদের ভাগ্য খারাপ।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিবারগুলোকে হোটেলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তারা তাদের ভালোবাসার মানুষদের কোন খবরের অপেক্ষায় আছেন।

ইসরাইল ও লাতিন আমেরিকার নাগরিকরাও এই ভবনে ছিলেন।

যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন লাতিন আমেরিকান অভিবাসী রয়েছেন বলে ওই দেশগুলোর কনস্যুলেট থেকে জানানো হয়েছে।

প্যারাগুয়ের ফার্স্ট লেডির এক স্বজনও নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন বলেন, প্যারাগুয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

উদ্ধারকারীরা ফার্স্টলেডি সিলভানা লোপেজ মোরেইরার বোন, বোনের স্বামী, তাদের তিন সন্তান ও গৃহকর্মী কারও সাথেই যোগাযোগ করতে পারছেন না।

২৫শে জুন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামিতে একটি ১২ তলা অ্যাপার্টমেন্ট ভবন ধসে পড়ার খবর পাওয়া যায়।

ভবনটি ধসে পড়ায় ওই কমপ্লেক্সের ১৩০টি ইউনিটের অর্ধেক তছনছ হয়ে গেছে।

সার্ফসাইড শহরে এই ভবনটি নির্মাণ হয়েছিল ১৯৮০ সালে।