যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার একটি জাদুঘরে মুসলিম সংস্কৃতির প্রদর্শনী চালু


হিথার খলিফা: আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া শহরের কোনো সুন্নি মসজিদে শুক্রবারে বিকেলে ভ্রমণে যান তবে হয়ত আপনাকে সেখানে শিমের তৈরি কেক দিয়ে আপ্যায়ন করা হতে পারে।

শিশুতোষ বই লেখক আমেনাহ মুহাম্মদ ডিগিন্স ১৯৭০ সালে শিমের তৈরি কেক দিয়ে আপ্যায়নের এই রীতি চালু করেছিলেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দল Nation of Islam এর সদস্যরা সুন্নি ইসলামের আদর্শ গ্রহণ করে।

কিন্তু শিমের তৈরি কেকের গুরুত্ব তার কাছে আরো বেড়ে যায় যখন তার পিতা ‘Ali Bean Pie factory’ নামের একটি কেক তৈরির কারখানা চালু করেন।

মুহাম্মদ ডিগিন্স বলেন, ‘শুধুমাত্র শিম কেকের জন্যই আমি প্রাইভেট বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছিলাম। আর এ জন্যই আমি কলেজে অধ্যয়ন করতে পেরেছিলাম।’

আর চূড়ান্তভাবে মুহাম্মদ ডিগিন্স শিমের তৈরি কেক বিক্রির অর্থ থেকে ফিলাডেলফিয়ায় ‘Please Touch Museum’ নামের একটি জাদুঘরে তার লিখা শিশুতোষ বই ‘বাশিরা’ এর প্রদর্শনী চালু করেছেন।

সেখানে ‘America to Zanzibar: Muslim Cultures Near and Far’ শিরোনামে একটি প্রদর্শনী চলেছিল এবং চলতি বছরের মে মাসে মুসলিমদের পবিত্র মাস রমজানে পুনরায় তা চালু করার কথা রয়েছে।

তাদের প্রদর্শনীতে আফ্রিকান-আমেরিকান মুসলিম ৮ বছর বয়সী বাশিরাহ নামের একটি মেয়ের চরিত্র থাকবে এবং একই সাথে তার বন্ধু হিসেবে ফাতিমা নামের একজন পাকিস্তানি-আমেরিকান শিশুর চরিত্র থাকবে।

এর পূর্বের একটি প্রদর্শনীতে বাশিরাহ নামের চরিত্রটি করেন চ্যানেল হেরন নামের একজন। সেখানে সংস্কৃতি উদযাপনের দিনে তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাকে কিছু মুখরোচক খাবার আনার কথা বলে। তখন বাশিরা গর্বের সাথে ঘোষণা করে যে, সে শিমের তৈরি কেক নিয়ে এসেছে।

তার বন্ধু ফাতিমা চরিত্রে অভিনয় করা এঙ্গি ফেনেল অবজ্ঞার সূরে জানতে চায়, শিমের তৈরি কেক? তার সংস্কৃতি সম্পর্কে এমন প্রশ্ন শুনে বাশিরা কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে।

বাশিরা তখন দর্শনার্থীদের কাছে জানতে চায়, ‘আমি কি খারাপ কিছু এনেছি?’

কিছু শিশু উত্তরে বলে- ‘না, না।’

এঙ্গি ফেনেল পরবর্তীতে বলেন, ‘শিশুরা আসলে এমনই।’ কিন্তু নাটিকায় যদিও তাদের কণ্ঠস্বর ব্যবহার করা হয়েছে পরবর্তীতে যখন তারা মূল অভিনেতাদের সাথে সাক্ষাত করে তখন তারা কিছুটা লজ্জাবোধ করে।

‘Please Touch Museum’ এর প্রদর্শনীতে দেখানো নাটিকার মূল প্লট লিখেন ডেফসিও নামের একজন এবং তিনি মুহাম্মদ ডিগিন্সের লেখা শিশুতোষ বই অবলম্বনে তা রচনা করেন।

মুহাম্মদ ডিগিন্স বলেন, ‘এ জন্যই আমি এর পরিচালনাকে ভালোবাসি। শিশুরা কিভাবে তাদের সম্পর্কে তুলে ধরে, কিভাবে তাদের বন্ধুদের সাথে আচরণ করে যখন তারা তাদের সাথে একমত হতে পারে না, যখন কিছু বুঝে না উঠেই অন্যদের সংস্কৃতিকে কিভাবে স্বাগত জানায় ইত্যাদি সম্পর্কে চিন্তা করতে আমি ভালোবাসি।’

‘Please Touch Museum’ এর উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সালিমা সুসওয়েল ‘America to Zanzibar’ নামের প্রদর্শনীটির মূল আয়োজক।

মুহাম্মদ ডিগিন্স নিজস্ব উৎসাহে শিশুদের জন্য বই লিখেন। সাহিত্যে মুসলিম শিশুদের আরো বেশী অংশগ্রহণ হবে বলে তিনি আশা করেন।

তিনি বলেন, ‘একজন আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে এখানে একের অধিক গল্প রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে এবং বেশীরভাগ আমেরিকান জানেনা যে, ১২ থেকে ২৫ শতাংশ আফ্রিকান এ দেশে মুসলিম হিসেবে এসেছে।’

মুহাম্মদ ডিগিন্সের বইয়ের উপর ভিত্তি করে নাটিকার মূল প্লট রচনাকারী ডেফসিও বলেন, ‘সকলেই খাদ্যের ধারণাটি সম্পর্কে খুব আশাবাদী, অনেকেরই কিছু প্রিয় খাদ্য রয়েছে যা তারা একে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করে নিতে চায়। সুতরাং আমি মনে করি যে এ ব্যাপারটি আসলেই সকলের মনের কথা বলবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাশিরার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে আরেকটি নাটিকা নিয়ে আসা হবে। তবে সেখানে গল্পের মূল কথাটি থাকবে।’

গল্পের প্লট লিখার সময় তিনি আরবি শব্দ ‘বিসমিল্লাহ’ এর ব্যবহার করেছেন এবং এর ইংরেজি ভাষান্তর ব্যবহার করেন নি।

ডেফসিও এবং মুহাম্মদ ডিগিন্স বলেন, তারা চেয়েছিলেন এই নাটিকার জন্য মুসলিম অভিনেতাদের বেঁচে নিতে কিন্তু সময়ের অভাবে তা হয়ে উঠেনি।

ফাতিমা নামের চরিত্রে অভিনয় করা ফেনেল যিনি খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, চরিত্রটিতে অভিনয় করার সময় তিনি কিছুটা ভয়ে ছিলেন কিন্তু তিনি পরে তা কাটিয়ে উঠেছিলেন এবং অন্যদের সংস্কৃতির প্রতি তিনি সম্মান রাখেন।

অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে ব্রিশহেন মিলার যিনি পশ্চিম আফ্রিকান-আমেরিকান শিক্ষার্থী এবং বাশিরার দাদার চরিত্রে এবং নিকোল স্টাসি যিনি একই সাথে শিক্ষক এবং বাশিরার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন।

‘Please Touch Museum’ এর সদস্য এঞ্জেলা কো বলেন, ‘বাশিরা চরিত্রটির মধ্য মজাদার উপায়ে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মত বার্তা রয়েছে।’

বন্ধুত্ব এবং সংস্কৃতি সম্পর্কিত সচেতনতার সাথে মুহাম্মদ ডিগিন্স একই সাথে ঐক্য ধরে রাখার বার্তা দিতে চেয়েছেন।

আর নাটিকাটির একেবারে শেষে চারজন অভিনেতা অভিনেত্রী দর্শকদের সামনে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ান এবং চূড়ান্ত ভাবে বলেন, ‘আমরা একই উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত, একই পরিবারের লোকজন।’

সূত্র: পিহলি ডট কম।